স্মরণকালের বিশাল গণজমায়েত
ঐক্যবদ্ধ না হলে পরাশক্তিরা মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে: আজহারী
দেশের কল্যাণে ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্যে আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
তিনি বলেন, ঐক্যের বিকল্প নেই। কিছুদিন আগে আমাদের লিডার ড. ইউনূস জাতীয় ঐক্যের জন্য সমস্ত দলকে ডাকছে না? ওনার কথায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনে অন্য ধর্মের সঙ্গেও ঐক্য হওয়া দরকার। না হয় বিপদ আছে। নিজেদের মাঝে মারামারি, মনোমালিন্য করা যাবে না। তাওহিদের দাওয়াতের জন্য এক হতে হবে। আমরা বিচ্ছিন্ন হলে আমাদের শক্তি কমে যাবে। একে অপরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে নিজের মধ্যে মতানৈক্য না করি। ঐক্যবদ্ধ না হলে পরাশক্তিরা আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে। আমি পেকুয়ার তাফসিরুল কোরআন মাহফিল থেকে আলেম ওলামা ও সকল রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলছি, ভেদাভেদ ভুলে আমরা জাতীয় ঐক্যে আবদ্ধ হই।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের পেকুয়ায় মরহুম মাওলানা শহীদ উল্লাহ স্মৃতি সংসদ ও সমাজ উন্নয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সাবেকগুলদীর মাঠে স্মরণকালের বৃহৎ তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান মোফাসসিরের বয়ানে আজহারী এসব কথা বলেন। রাত সাড়ে ৯টায় মঞ্চে উঠে ১১টা পর্যন্ত বয়ান করেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
আজহারীর বয়ানের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ লন্ডন থেকে ভিডিও প্রজেক্টরে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
মাহফিলের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় শুক্রবার সকাল ১০টায় আর শেষ হয় আজহারীর বয়ানে। প্রথম অধিবেশনে অধ্যক্ষ মাওলানা বদিউল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা পেশ করেন শায়খ মুফতী ইব্রাহিম, মাওলানা আবদুল্লাহ আল আমীন, মাওলানা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ও কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী। দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে বয়ান করেন মাওলানা সাদিকুল রহমান আজহারী, শায়খ সালাহ উদ্দিন মাক্কী ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী প্রমুখ।
এর আগে আজহারী আসার খবরে শুক্রবার সকাল থেকে পেকুয়ার সাবেকগুলদির মাহফিল স্থলে মানুষের ঢল নামে। বিকেল থেকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাহফিল স্থল। তাফসিরকে কেন্দ্র করে ময়দান ও আশপাশ স্থলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আয়োজক কমিটি ও প্রশাসন। বিকেলে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন একটি হেলিকপ্টারে করে পেকুয়ায় এসে পৌঁছান আজহারী। তাকে একনজর দেখতে সববয়সী মানুষের ভিড় লেগে যায়। এসময় হেলিপ্যাড থেকে মাহফিলস্থল পর্যন্ত লালগালিচা বিছিয়ে আজহারীকে বরণ করা হয়।
অপরদিকে মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়। ফলে অতিরিক্ত মানুষের চাপে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাত অবধি কাজ করছিল না মোবাইল ইন্টারনেট। আজহারীর বয়ান চলাকালে প্যান্ডেল এলাকা ছাড়াও আশপাশ লোকারণ্যে পরিণত হয়। অনেকে দাঁড়িয়ে বয়ান শোনেন। বিশাল প্যান্ডেলে নানা পেশার লাখো মানুষ নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে আজহারীর বয়ান শোনেন।
পেকুয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ামত উল্লাহ নিজামী জানান, ড. আজহারীসহ জনপ্রিয় ইসলামী আলোচকদের আগমনে ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নামে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সীমান্ত উপকূল পেকুয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রায় দু’ঘণ্টা বয়ান করেন আজহারী। বুধবার রাত থেকে বিভিন্ন স্থানের কয়েকশ ইউটিউবার ক্যামেরা নিয়ে মাহফিল স্থলে জড়ো হন। বয়ান চলাকালে অনেকে সরাসরি লাইভ প্রচার করেন।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, খ্যাতিমান ইসলামি আলোচক ড. আজহারীর বয়ান শেষ হয় রাত প্রায় ১১টার দিকে। কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতি থাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় চারপাশে সজাগ দৃষ্টি রাখে যৌথ বাহিনী। মুসল্লিরা প্যান্ডেলস্থল ত্যাগ না করা পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী মাহফিল স্থল ও সড়কে টহল সচল রাখে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই স্মরণকালের বিশাল গণজমায়েতে মাহফিল সম্পন্ন হওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস