পিছিয়ে গেল পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিকমানে রূপ দেওয়ার কাজ
আগামী বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার কথা ছিল পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রূপ দেওয়ার কাজ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠালে অনুমোদন সাপেক্ষে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার কথা ছিল এ প্রকল্পের কাজ। এক হাজার ৪৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৭ সালে। কিন্তু কাজ শুরু হতে আরও ৮-৯ মাস দেরি হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে অবহেলিত হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি জাতীয় নীতিনির্ধারক ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তার অংশ হিসেবে এই হাসপাতালটির বড় একটি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা পাস হয়েছে। ৬০০ শয্যার হাসপাতালসহ একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। সেটা প্রক্রিয়াধীন। সেখানে কিছু অবজারভেশন আছে। সেটি ঠিকঠাক হলে পরিকল্লনাটি পাস হয়ে গেলে আশা করা যায় অবকাঠা নির্মাণ হবে। জনবলও আসবে।
তিনি বলেন, আমরা তো অল্প সময়ের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারে এসেছি। হাসপাতাল সম্প্রসারণের ব্যাপারটি দীর্ঘমেয়াদি। শুরুর প্রক্রিয়াতেও ৮-৯ মাস সময় লেগে যাবে। তবে এটার একটা দৃশ্যমান অবস্থায় আমরা আনতে পারবো বলে আশা রাখছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, জনবল সংকট খুব বড় সমস্যা নয়। এটি সহজেই মেটানো সম্ভব। সেদিকটাও দেখা হবে। যতগুলো শূন্যপদ আছে সেগুলো পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘দূর-দূরান্তের জেলা থেকে এই হাসপাতালে আসেন রোগীরা। কখনো কখনো বহির্বিভাগে রোগী দেখার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় অন্যদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অথচ আবাসন ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় দালালের খপ্পরে পড়েন রোগীর স্বজনরা। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রেও একই ভোগান্তি। অনলাইন টিকিট সিস্টেম থাকলে ভোগান্তি কমবে দাবি অনেকের। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন’— এর উত্তরে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী বলেন, ‘খুব অল্প হাসপাতালে অনলাইন টিকিটিং আছে। তবে এটি কঠিন কিছু নয়। মানুষের ভোগান্তি কমাতে এটি করা যায়। এটিসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও মাথায় রাখা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান। সকাল ১০টায় মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে পাবনা মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এরপর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পাবনা মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অর্ধশতাব্দী পরও জনসংখ্যা ও মানসিক রোগীর অনুপাতে শয্যা সংখ্যা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জনবল, আধুনিক সুযোগ এবং আবাসন সুবিধা বাড়েনি। বহির্বিভাগ, আন্তঃবিভাগ, বৃত্তিমূলক ও বিনোদনমূলক বিভাগ থাকলেও কোনোটিতেই নেই আধুনিকতার ছোঁয়া। নতুন ভবন, চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জামাদি, গবেষণাগার, মেডিসিন সংরক্ষণের জন্য আধুনিক স্টোররুম কিংবা চিকিৎসক ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন—এসবের কোনোটিই দীর্ঘসময়েও নির্মিত হয়নি। তবে চলতি বছরের জুলাই মাসে মানসিক হাসপাতাল, পাবনাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
প্রস্তাবের উদ্দেশ্যে বলা হয়, নতুন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে হাসপাতালটিকে আন্তর্জাতিক মানের পূর্ণাঙ্গ মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করা। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালুর মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সুবিধা তৈরি করা। এরমধ্য দিয়ে যোগ্য ও প্রশিক্ষিত জনবল বিভিন্ন শাখায় গবেষণার সুযোগ তৈরি করা। এছাড়া হাসপাতালে নতুন ও কার্যকরী বিভিন্ন বিভাগ চালু এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপনের মাধ্যমে মানসিক রোগের চিকিৎসায় বহুমুখী আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ, ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও সহযোগী জনবলের কর্মসংস্থান তৈরি, মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও টেলিমেডিসিন সেবা চালুর মাধ্যমে কমিউনিটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং বিশেষায়িত শিশুদের জন্য বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসআর/জেআইএম