রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে চর হেয়ার
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এক অনিন্দ্য সুন্দর স্থান চর হেয়ার। স্থানীয়দের কাছে কলাগাছিয়ার চর হিসেবে পরিচিতি পেলেও বর্তমানে এটি চর হেয়ার নামে বেশ পরিচিত। জেগে ওঠা এই চরের পূর্বপাশে রয়েছে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি সোনারচর। পশ্চিমে চর তুফানিয়া, উত্তরে টাইগারদ্বীপ এবং এর পাশে আছে চর কাশেম। কুয়াকাটা থেকে সাগরপথে এই চরের দূরত্ব ৩৫.১৯ কিলোমিটার। আর রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে চরটির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। পরিচ্ছন্ন আর নির্ঝঞ্জাট এই চরে রয়েছে চার কিলোমিটার দীর্ঘ বালুকাময় সৈকত।
সম্প্রতি কুয়াকাটা থেকে এই চরে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। স্থানীয় একটি এনজিওর পক্ষ থেকে একজন পর্যটন উদ্যোক্তাকে পর্যটন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে সহযোগিতাও করা হচ্ছে।
‘গুগল আর্থ’ এর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৪০৩ হেক্টর নিয়ে গঠিত চর হেয়ারে রয়েছে চার কিলোমিটার দীর্ঘ বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। যার মধ্যে ১৭৮.৬৮ হেক্টর এলাকায় রয়েছে বনভূমি। বাকি স্থানগুলোতে আছে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ি, কৃষিজমিসহ মাছের ঘের। পর্যটকরা চাইলে এসব কৃষক পরিবারের কাছ থেকে হাঁস, মুরগিসহ ছাগল, ভেড়া কিংবা মহিষের দুধ কিনতে পারবেন। এছাড়া চরের চারপাশে সার্কেল করলে এর পরিমাপ দাঁড়ায় ৮.৫৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে চরের দৈর্ঘ্য ২.৭৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১.৬৫ কিলোমিটার।
স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তা আইয়ুব খান বলেন, কুয়াকাটা থেকে পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার কিংবা স্পিডবোটে করে সহজেই এই চর হেয়ারে আসতে পারেন। সেখান থেকে সোনারচর কিংবা চর মন্তাজের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে আবার চরমন্তাজ থেকে লঞ্চযোগে সহজেই ঢাকায় ফেরার সুযোগ রয়েছে। একইভাবে ঢাকা থেকে সরাসরি দোতলা লঞ্চে করে চরমন্তাজ হয়ে চর হেয়ার ঘুরে কুয়াকাটা থেকে ঢাকার ফিরতে পারেন। যেসব পর্যটকরা কিছুটা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, তাদের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
বর্তমানে (গ্রামীণ মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট) নামে একটি এনজিও স্থানীয় একজন উদ্যোক্তাকে পর্যটনবান্ধব বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরিতে সহায়তা করছে। এখানে যোগাযোগ করে আসলে পর্যটন উদ্যোক্তা রান্না করে খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি চরে রাত্রিযাপনের জন্য তাবু সরবরাহসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করছেন। এছাড়া এনজিওটির সহযোগিতায় চরে বসানো হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও গোসলখানা। রয়েছে সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ, রাতে চলাচলের জন্য পথে বসানো হয়েছে সোলার স্ট্রিটলাইট, পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে সি-বিচ বেঞ্চ ও ছাতা।
এদিকে নতুন সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীরা চর হেয়ারে ভ্রমণের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। তিন থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করে একজন পর্যটন দুই দিন এক রাত এখানে ভ্রমণ করতে পারছেন।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, উপকূলের দ্বীপ ও চরসমূহে পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করতে জেলা প্রশাসন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে। কীভাবে এই চরগুলোকে আরও ব্র্যান্ডিং করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সক্রিয় তারা এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন।
এফএ/এএসএম