বাড়িতে নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি দল
সীমান্তে পাওয়া চা শ্রমিক গোপালের মরদেহে ৯ গুলির চিহ্ন
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাওয়া চা শ্রমিক গোপাল ভাগতির মরদেহে ৯টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাইয়ূম।
তিনি বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। এসময় নিহতের শরীরে ৯টি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিষয়টি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। বিষয়টি নিয়ে এখন তদন্ত চলছে।
এদিকে এ ঘটনায় গোপাল ভাগতির বাড়িতে গিয়ে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিহত গোপাল ভাগতির পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের খোঁজ খবর নেন এবং গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম দাশ। এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির মৌলভীবাজার সদর উপজেলা প্রতিনিধি ফাহাদ আলম, রুমন কবির, আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি (স্বাস্থ্য বিষয়ক সমন্বয়ক সেল, সিলেট) আলী আব্বাস শাহীন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তামিম আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় নিহত গোপালের স্ত্রী দয়া ভাগতি বলেন, আমার স্বামী শুধু বাগানে কাজ করতেন। কিন্তু বাগানে কাজ করে ১৭৮ টাকা রোজে পেট চলে না। বড় মেয়ের অপারেশনে ৩ লাখ টাকা গেছে। ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ লাগে। কিস্তি আছে। তাই মাঝে মাঝে পাহাড়ে গিয়ে বাঁশ এনে বিক্রি করতেন। বাঁশ আনতে গিয়েই স্বামী মারা গেলেন। এখন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবো এই চিন্তায় দিশাহারা আমি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম দাশ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখানে এসে নিহত গোপাল ভাগতির পরিবার ও পাহাড়ে তার সঙ্গে বাঁশ কাটতে যাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, গোপাল মারা যাওয়ার আগে তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বলেছেন, বিএসএফ আসছে, তোরা পালা। এসময় ভয়ে তার সঙ্গে থাকা অন্যরা পালিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের পতিত স্বৈরাচারকে জায়গা দিয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বুকে গুলি চালাচ্ছে। এভাবে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে না। এই সম্পর্ক দিনে দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে। ভারত সেটা নিজেই তৈরি করেছে। আমরা চাই যে সীমান্তে হত্যা বন্ধে সরকার আন্তর্জাতিক মহলে দাবি তুলুক। একটা মানুষও যাতে আর হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। এর আগে আমরা দেখেছি এখানে স্বর্ণা দাস নিহত হয়েছেন। পঞ্চগড়ের আনোয়ার হোসেন নিহত হয়েছেন। এবার আমরা গোপাল ভাগতিকে হারালাম। এইভাবে আমার দেশের নিরীহ জনগণ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ দিতে পারে না। আমাদের সরকার কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিক। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি জানাক। আর যাতে একটি প্রাণও না ঝরে, অবিলম্বে এই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, বড়লেখা সীমান্তে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে আমরা তার জন্য নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্তের মাধ্যমে সত্য ঘটনা উদঘাটনে চেষ্টা করছি। এরমধ্যে বিজিবির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা (বিজিবি) পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বিএসএফ কর্তৃপক্ষকে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। প্রতিবাদলিপি দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর দুই পক্ষ (বিজিবি-বিএসএফ) পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বড়লেখায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো লাইনের ২০০ গজ অভ্যন্তর থেকে চা শ্রমিক গোপাল ভাগতির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে বিজিবি ও পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, শনিবার পাহাড় থেকে বাঁশ আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান গোপাল। এসময় তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন শ্রমিক পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
নিহত গোপাল বড়লেখা উপজেলার নিউ সমনবাগ চা বাগানের মোকাম সেকশনের সাবেক ইউপি সদস্য অকিল ভাগতির ছেলে। ঘটনার খবর পেয়ে নিহত গোপালের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে যান ইউএনও তাহমিনা আক্তার। এসময় তিনি তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি জামায়াতের নেতৃবৃন্দরা নিহতের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা জামায়াত গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে।
এদিকে বড়লেখা সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
ওমর ফারুক নাঈম/এফএ/এএসএম