ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রাজশাহী

দুই হিমাগারের আলুর অবৈধ মজুত খালি করলো প্রশাসন

জেলা প্রতিনিধি | রাজশাহী | প্রকাশিত: ০৯:৫০ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজশাহীতে অবৈধভাবে আলু মজুত করে রাখা দুটি হিমাগারে অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পরে দুই হাজার ৬০৬ বস্তা আলু নির্ধারিত দামে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এসময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

রবি ও মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) এ অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয় প্রশাসন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলুর বাজারে কয়েক দফা মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ঠেকাতে সম্প্রতি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। মজুত করা আলু ৩০ নভেম্বরের পর হিমাগারে রাখা যাবে না এমন আদেশও দিয়েছে সরকার। কিন্তু পবার কয়েকটি হিমাগারে নির্ধারিত সময়ের পরও বিপুল পরিমাণ আলু মজুদ করে রাখা ছিল।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, সরকার পাইকারি বাজারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলু মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। তারা বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার হিমাগার খালি করার নির্দেশ দেন। এরপরও কয়েকটি হিমাগর আলু মজুত রেখেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন অভিযান চালানো হচ্ছে।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান পবা উপজেলার নওহাটা পৌর এলাকার আলাইবিদিরপুর এলাকার আমান হিমাগারে অভিযান চালান। এসময় প্রতিটি ৬০ কেজির ৩০৬ বস্তা আলু খোলা বাজারে ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দেন। পরে বিক্রির টাকা আলুর মালিককে দেওয়া হয়। এরপর তারা একই এলাকার রহমান ব্রাদার্স কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালান। তখন হিমাগারের কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। ওইসময় ম্যাজিস্ট্রেট ঘোষণা দেন, ১৭ ডিসেম্বর ফের অভিযান চালানো হবে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ওই হিমাগারে দেখা যায়, আলু বের করে বিক্রি করা হচ্ছে। শ্রমিকরা রীতিমতো আলু বাছাইয়ের কাজ করছেন।

দুই হিমাগারের আলুর অবৈধ মজুত খালি করলো প্রশাসন

অভিযানের আগের দিন ফোনে হিমাগারের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেছিলেন, তাদের হিমাগারে প্রায় এক হাজার ৬০০ বস্তা আলু রয়েছে। এই আলু কৃষকের। তারা বিক্রি না করলে হিমাগার কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।

অভিযানের সময় পালানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে সাধারণত তারা চলে যান। দুজন কর্মচারী ছিলেন। তাদের আটক করে নিয়ে গিয়ে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, ওই হিমাগারে বিক্রির পরও দুই হাজার ২০০ বস্তা আলু মজুত রয়েছে। কিছুক্ষণ পরে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন গিয়ে তাদের আরেকটি চেম্বারে অভিযান চালিয়ে আরও ১০০ বস্তা আলুর মজুত পান। সব মিলিয়ে তাদের হিমাগার থেকে দুই হাজার ৩০০ বস্তা আলু জব্দ করা হয়।

খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আলুর ক্রেতারা এসে আলু কেনার জন্য ভিড় করতে থাকেন। এসময় জেলার মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাটি এলাকার রাশেদুল হক নামের একজন ব্যবসায়ী এসে বাধা দেন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে রাশেদুল হক বলেন, তার হিমাগারে ১২ হাজার বস্তা আলু ছিল। সবশেষ ১ হাজার ৫০০ বস্তা অবশিষ্ট ছিল। এগুলো কেনা ছিল ৩৪ টাকা কেজি দরে। ৪৫ টাকা কেজিতে খরচ পড়েছে। তিনি ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। এখন তাকে জবাই করে সেই আলু অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হলো। তারা তো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করবেন। তার চেয়ে জনগণকে এই ন্যায্য দামে দিলে তিনি খুশি হতেন।

এ বিষয়ে ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, তাদের দায়িত্ব হিমাগারের মজুত খালি করে দেওয়া। কিন্তু তারা যাদের কাছে আলু বিক্রি করেছেন, তাদের ফোন নম্বর রেখে দিয়েছেন। এই আলু ভোক্তাদের কাছে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। তারা যেখানে আলু বিক্রি করবেন, সেখানে তদারকি করা হবে।

শুধু রাজশাহী জেলাতেই ৪৩টি হিমাগার আছে। এতে সংরক্ষণ বা মজুত করা যায় প্রায় ৮৫ লাখ বস্তা আলু। প্রতিবস্তায় আলু থাকে ৬০-৬৫ কেজি। এখনো অনেক হিমাগারে আলু মজুত করে রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব হিমাগার পরিদর্শনের কথা বলছে প্রশাসন।

এই আলু খুচরা বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। মঙ্গলবার রাজশাহীর শহরের বাজারগুলো থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও এই আলু ৭০ টাকা কেজির কমে বিক্রি হচ্ছে না। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।

সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/এমএস