হোসনে আরা এখন কার কাছে যাবেন?
স্বামীর মৃত্যুর পর অন্ধকার নেমে এসেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের বাসিন্দা হোসেনে আরা বেগমের জীবনে (৪২)। স্বামীর সম্পদকে কেন্দ্র করে সৎ ছেলেদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তিনি। সবশেষ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বেধড়ক মারধরে রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর আগে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। হোসনে আরা বেগম উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চরপাগলা গ্রামের মৃত আব্দুস শহিদের স্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চরপাগলা গ্রামের আব্দুস শহিদের স্ত্রী মারা যায়। এরপর পারিবারিকভাবে শহিদের সঙ্গে হোসনে আরার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল তাদের। গত সেপ্টেম্বরে শহিদ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। এরপর থেকে অমানিশা নেমে আসে হোসনে আরার জীবনে।
হোসনে আরাকে বাড়ি ছাড়তে সৎ ছেলেরা নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন ও হুমকি দেন। সৎ ছেলে রিপন, হোসেন ও সবুজ তাকে বেশ কয়েকবার মারধরও করেন। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের জানান হোসনে আরা। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন সৎ ছেলেরা। এসময় তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে মারজাহান বেগম ও ছেলে সোহাগকেও মারধর করা হয়। পরে খবর পেয়ে হোসনে আরার ভাই নুর হোসেন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হোসনে আরার মেয়ে উদয়ন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারজাহান বেগমের ভাষ্য, ‘বাবার মৃত্যুর পর সৎ ভাইয়েরা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে আমাদের ওপর একের পর এক নির্যাতন করছে। বাবা বিভিন্নজনের কাছে টাকা পেতেন। তার ডকুমেন্ট ১৭টি স্ট্যাম্পে ছিল। সেগুলোও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আমার এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকাও তারা দেয়নি।’
নির্যাতনের শিকার হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘স্বামীর সম্পদ সৎ ছেলেরা ভোগ-দখল করে রেখেছে। সম্পদ থেকে বঞ্চিত এবং বাড়িছাড়া করার জন্য তারা আমাদের অত্যচার-নির্যাতন করছে। তারা কাউকে মানে না। আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে নিরাপত্তাহীন। এখন কার কাছে যাবো?’
সৎ ছেলে সবুজ হোসেন বলেন, ‘মারধর করার অভিযোগ সত্য নয়। নারিকেল গাছ কাটা নিয়ে আমার ভাবির সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। তাদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত এবং বাড়িছাড়া করার পরিকল্পনা আমাদের নেই। পারিবারিক বিষয় নিয়ে ইউপি কার্যালয়েও বসা হয়েছে।’
এ বিষয়ে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান রাসেল বলেন, ‘বিধবার অভিযোগ নিয়ে পরিষদে বৈঠক করা হয়। এরপর সৎ ছেলেরা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে বলে শুনেছি। ওই নারীকে থানায় অভিযোগ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি কেউ জানাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।
কাজল কায়েস/এসআর/জেআইএম