ডিসিকে মঞ্চে রেখে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
কিশোরগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসককে মঞ্চে রেখেই ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়েছেন এক মুক্তিযোদ্ধা। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে জেলাজুড়ে।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী ঘরানার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাধান্য দিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সাজানো হয়। এমনকি যারা ১৮ জুলাই জেলা শহরের কালীবাড়ি মোড়ের বিজয় চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছিলেন তাদেরও মঞ্চে দেখা গেছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়।
সভায় একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবি ছিদ্দিক ও ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া বক্তব্য রাখেন। ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া তার বক্তব্য শেষ করার সময় ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান’ দেন।
সংবর্ধনায় উপস্থিত বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী ঘরানার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক দুই কমান্ডার এবি ছিদ্দিক ও ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া ছাড়াও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মাহবুব আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান খান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঞা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া তার বক্তব্য শেষ করার সময় ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। এসময় মঞ্চে থাকা জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানসহ কেউ কোনো প্রতিবাদ বা আপত্তি করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত। তার ছেলে খালেদ সাইফুল্লাহ সাফাত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। অন্যদিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবি ছিদ্দিক একজন তুখোড় আওয়ামী লীগার। তিনি কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির একান্ত সহচর হিসেবে পরিচিত।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সময় যাদের দাপটের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেত, তাদের অনেককেই এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাপটের সঙ্গেই অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। তারা বক্তব্যও দেন। সোমবারও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সরব উপস্থিতি এবং বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এরমধ্যে সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া বক্তব্য শেষ করার সময় ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। কিন্তু এ নিয়ে তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে আমরা বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শুনছেন না। এরই ফলশ্রুতিতে আজকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটেছে, যা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি মনে করি, এটি জেলা প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ বলেন, আজকে কিশোরগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৪ এর শহীদ ভাইদের সঙ্গে এটি প্রতারণা। আমরা মনে করি, প্রশাসনে আওয়ামী লীগের অনেক দোসর রয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তারা দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ এবং পদোন্নতি লাভ করেছে। প্রশাসনের অনেকে মনে করে যে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া বলেন, এটা বক্তব্য শেষে একটা মুডে বলে ফেলছি। ২০২৪ আর ৭১ এক নয়। আমরা শরীরের রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করছি। পোস্টারের মধ্যে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ছবি আসতো।
স্লোগান দেওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, আমি তো শুনিনি। আমি শুনতে পাইনি।
এসকে রাসেল/জেডএইচ/এমএস