কুষ্টিয়ায় অভিযানে জাসদ নেতার ভাইয়ের মৃত্যু, ৩ পুলিশ অবরুদ্ধ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পুলিশের অভিযানের সময় এক জাসদ নেতার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশের এক এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যকে স্থানীয় একটি বাজারের দোকানে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ জাসদ নেতাকর্মীরা।
প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া থেকে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরুদ্ধ তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে থানা পুলিশের হেফাজতে দিয়ে আসেন।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম দুদু (৪৫)। তিনি একই গ্রামের আজিজ মন্ডলের ছেলে এবং পেশায় একজন চায়ের দোকানদার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদগ্রাম ৪ নম্বর ব্রিজের কাছে রফিকুলের চায়ের দোকান। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভেড়ামারা থানার এসআই সালাউদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ওই এলাকায় অভিযানে যান। এসময় পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ব্রিজ থেকে রফিকুল লাফ দেন। পুলিশ সেখানে ধাওয়া করে তাকে আটক করে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানান, রফিকুল ইসলামকে রাত ৭টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালে আনা হয়। এসময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জাসদ নেতাকর্মীরা পুলিশকে ধাওয়া দেন। তারা এক এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যকে আটকের পর মারপিট করে একটি দোকানে আটকে রাখেন। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া থেকে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতার হাত থেকে তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে থানা পুলিশের হেফাজতে দিয়ে আসেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান বলেন, একজনকে ব্রিজের ওপর মারধর করতে দেখি। এগিয়ে গেলে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাধা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখান থেকে ব্রিজের ১০ ফুট নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এর পরপরই বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের এসআই সালাউদ্দিনসহ তিন পুলিশকে আটক করে স্থানীয় জনতা। অন্য তিন পুলিশ সদস্য পালিয়ে যান।
নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, আমার ভাই রফিকুল কোনো মামলার আসামি ছিলেন না। মামলার কোনো ওয়ারেন্টও দেখাতে পারেনি পুলিশ। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন দাবি করে বলেন, দুদু নিরপরাধ। জনতার রোষে তিন পুলিশের জীবন বিপন্ন হতে পারতো। আমি ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুষ্টিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) আবদুল খালেক বলেন, কেন পুলিশ সেখানে গিয়েছিল সেটার তদন্ত করে দেখা হবে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানে যাওয়া পুলিশদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনার জন্য যদি কোনো পুলিশ সদস্য দায়ী থাকেন তবে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
আল-মামুন সাগর/বিএ