দুই বছরেও নির্মাণ হয়নি নিঝুম দ্বীপের ভাঙা ৩ কালভার্ট
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত দুই বছর ধরে এ সড়কের তিন জায়গায় কালভার্ট ধসে যাতায়াত অনেকটা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ওই এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাতায়াতকারীরা। এ কারণে গত দু’বছর নিঝুম দ্বীপের পর্যটক কমে এ শিল্পে জড়িত সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পাকা রাস্তায় অনেকগুলো ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। অব্যাহত সব সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের প্রবল জোয়ার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির ওপর দিয়ে গড়িয়েছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোনো কাজ না হওয়ায় সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো সড়কটি বেশিরভাগ এলাকা ধসে ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়েছে।
মোটরসাইকেলচালক মো. সালাহউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অস্বাভাবিক জোয়ারে ছোঁয়াখালি লাইট হাউস সংলগ্ন ব্রিজটি ধসে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এ কারণে মানুষের পরপারে দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা চালকদের চাঁদা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় সংরক্ষিত বনের গাছ দিয়ে একটি কাঠের ব্রিজ করে সাময়িক সংযোগ রাখার ব্যবস্থা করলেও ক্রমশ সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
একইভাবে সিরাজ চেয়ারম্যানের বাসা সংলগ্ন মূল সড়কের ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় একটি বিকল্প মাটির রাস্তা তৈরি করলেও সেটিও হুমকিতে রয়েছে। এ স্থানে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা পার করতে চালকদের চরম হিমশিম খেতে হয়। মালামাল পরিবহনে টমটমগুলো উত্তর পাশ থেকে দক্ষিণ পাশে যেতে পারে না। ফলে ব্যবসায়ীদের মালামালগুলো মাথায় করে ভাঙা রাস্তা পার করতে হচ্ছে। এতে মালামালের খরচ অনেক বেড়ে যায়।
মৎস্য ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস বলেন, কামাল মেম্বারের বাড়ির পাশে পোলটি জোয়ারে ভেঙে গেছে। ভুক্তভোগীরা বিকল্প রাস্তা করে নিলেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহনে অনেকে দুর্ঘটনায় পড়ছেন। বন্দরটিলা থেকে নামারবাজারে মাছ, বরফ ও মালামাল পরিবহনে ভীষণ কষ্ট ও ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় ফার্মেসির পল্লি চিকিৎসক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, বছরের পর বছর রাস্তাটির সংস্কার না হওয়ায় জনমনে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলতে হয়। সড়কটির সংস্কারের কাজ হচ্ছে না অনেক দিন পর্যন্ত। সংস্কার বিহীন সড়কটি এ অঞ্চলের স্কুল-মাদরাসার ছাত্রছাত্রী, হাট বাজারে শত শত মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
সোহেল রিসোর্টের মালিক মো. ইব্রাহীম জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপের কারণে নিঝুমদ্বীপে ভ্রমণ পিপাসুদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। পুরো রাস্তায় গর্ত হয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা নাই। মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, মোক্তারিয়ার ঘাট থেকে জাহাজমারা পর্যন্ত রাস্তা এবং নিঝুমদ্বীপ ১০ কিলোমিটার রাস্তা অতি দ্রুত কাজ না করলে পর্যটন সম্ভাবনাময় নিঝুম দ্বীপের নাম মুছে যাবে। জনদুর্ভোগ দূরীকরণে শীঘ্রই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লাভলী বেগম বলেন, নিঝুম দ্বীপের রাস্তার বেহালদশা। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরিষদে কোন তহবিল নাই। হাতিয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনেকদিন পর্যন্ত না থাকায় রাস্তার মেরামতের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।
হাতিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, নিঝুমদ্বীপে ৪৫ মিটারের একটি ব্রিজ ও দুটি কালভার্ট ধ্বসে রাস্তা বিচ্ছিন্ন হলেও সাময়িকভাবে বিকল্প রাস্তা করে মোটামুটি সংযোগ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সেখানে রাস্তার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
ইকবাল হোসেন মজনু/আরএইচ/জিকেএস