ফিকে হয়ে গেছে বাসন্তির উচ্ছ্বাস
এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও ফিকে হয়ে গেছে বাসন্তির উচ্ছ্বাস। কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠার কারণে কোনো বাধাই তার সাফল্যের রথ থামাতে পারেনি। কিন্তু আনন্দ নেই বাসন্তির। ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা চালানো নিয়ে হতাশ বাসন্তির পরিবার।
বাসন্তি বণিকের বাড়ি মির্জাপুর পৌরসভার মির্জাপুর গ্রামে। বাবার নাম নারায়ণ চন্দ্র বণিক। মায়ের নাম কমলা বণিক। তিন বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। বাসন্তি এ বছর মির্জাপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
তিন শতক জমির উপর বসতভিটা ছাড়া তাদের অন্য কোনো সম্পদ নেই। বাসন্তির বাবা-মা অন্যের ফায়-ফরমায়েশ শুনে যে সামান্য আয় হয় তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চালায়। কিন্তু বাবা নারায়ণ চন্দ্র বণিক গত তিন মাস ধরে গুরুতর অসুস্থ।
মা কমলা রানী বণিক জানান, আর্থিক সংকটের কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে তার লেখাপড়া বন্ধ করার চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছিল। কিন্ত বাসন্তি মেধাবী হওয়ায় এবং সরিষাদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মুক্তি রানী সাহার সহযোগিতায় ২০১০ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়।
পরবর্তীতে সে মির্জাপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অষ্টম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। ওই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় মেধাবী বাসন্তিকে বিভিন্ন সময় কাগজ কলমসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হরেকৃষ্ণ সরকার, খুশি মোহন সরকার এবং নূরুল ইসলাম এই তিন শিক্ষক তাকে বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে সে নিজেও বাচ্চাদের পড়িয়ে তার লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছে। এভাবেই বাসন্তি লেখাপড়া করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পায়। বাসন্তির ইচ্ছা ভাল মানের কোনো কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের। কিন্ত আর্থিক সংকটে তার আর লেখাপড়া হবে কিনা সে চিন্তায় বাসন্তি উদ্বিগ্ন।
সরিষাদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মুক্তি রানী সাহা বলেন, দরিদ্র পরিবারটি আর্থিক সংকটের কারণে বাসন্তির লেখাপড়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিষয়টি জানার পর তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে বাসন্তির লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন।
মির্জাপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান উদ্দিন আহমেদ ও সহকারি প্রধান শিক্ষক হরেকৃষ্ণ সরকার জানান, বাসন্তি অত্যন্ত মেধাবী হওয়াতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার পরীক্ষার ফিসহ সমস্ত খরচ বহন করে। তাকে একটু সহযোগিতা করলে সে ভবিষ্যতে আরও ভাল ফলাফল করবে।
উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বাসন্তি ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অথবা সরকারি কর্মকর্তা হতে চায়। বাসন্তির এই প্রত্যাশা কী পূরণ হবে?
এসএস/পিআর