ভুয়া তল্লাশি চৌকিতে অভিযান, সোর্সসহ এসআইকে গণপিটুনি
গণপিটুনির শিকার হয়েছেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইউনুছ আলী ও তার কথিত সোর্স পারভেজ হোসেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের দুজনকে উদ্ধার করে। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে আক্কেলপুর-জয়পুরহাট সড়কের আক্কেলপুর উপজেলার হালির মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
থানার এসআই ইউনুছ আলী তার সোর্সকে নকল পুলিশ সাজিয়ে দুজন মিলে সড়কে তল্লাশি চৌকি বসান। এ সময় তারা যানবাহন আটকে ঘুস আদায় ও হয়রানি করছিলেন বলে অভিযোগ স্থানীয় জনতার।
এ ঘটনায় রাত সাড়ে দশটার দিকে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব আক্কেলপুর থানায় আসেন। তিনি ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে এসআই ইউনুছ আলীকে থানা থেকে প্রত্যহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করেন। পুলিশের রিফ্লেক্টিভ ভেস্টসহ আটক সোর্স পারভেজ হোসেনের বিরুদ্ধে রাতেই থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বৃহস্পতিবার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, এসআই ইউনুছ আলীকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সোর্স পারভেজ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার পারভেজ হোসেন নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার চকবেনী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি জয়পুরহাট আদালতের একজন আইনজীবী সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া পুলিশের সোর্সের কাজও করেন বলে জানিয়েছেন পারভেজ।
থানা পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর-জয়পুরহাট সড়কের আক্কেলপুর পৌর শহরের কেসের মোড় এলাকাটি রাতের জন্য বিপজ্জনক। সেখানে আগে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতো। বুধবার সন্ধ্যায় থানার এসআই ইউনুছ আলী কেসের মোড়ে গোপনে তল্লাশি চৌকি বসান। এসআই ইউনুছ আলী সাদা পোশাকে আর সোর্স পারভেজ হোসেন পুলিশের রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরে তল্লাশি চৌকি পরিচালনা করছিলেন। এ সময় তারা সড়কের উভয় দিকে চলাচলকারী অটোভ্যান, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল আরোহীদের তল্লাশি চৌকিতে থামান। এসআই ইউনুছ আলীর নির্দেশে সোর্স পারভেজ কয়েক জনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘুস নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাত সাড়ে আটটার দিকে আক্কেলপুর পৌরশহরের দিক থেকে একটি মোটরসাইকেল জয়পুরহাটের দিকে যাচ্ছিল। মোটরসাইকেলটি তল্লাশি চৌকিতে পৌঁছালে পুলিশের রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরা সোর্স পারভেজ মোটরসাইকেলটি থামানোর সংকেত দেন। বিপদ ভেবে মোটরসাইকেলের চালক দ্রুতগতিতে তল্লাশি চৌকি অতিক্রম করে চলে যান। এ ঘটনার এক মিনিট পর তল্লাশি চৌকিতে আরেকটি মোটরসাইকেল থামানো হয়। পুলিশের রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরা সোর্স ওই মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে আগের মোটরসাইকেলকে ধাওয়া করেন। হালির মোড়ে পৌঁছার পর পারভেজ পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল চালককে অকথ্য ভাষায় গালিগলাজ করে তাকে মারতে উদ্যত হন। পুলিশ দেখে সেখানে উৎসুক লোকজন জড়ো হন। মোটরসাইকেল চালক উৎসুক লোকজনদের ঘটনাটি খুলে বলেন। তখন উৎসুক জনতা রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরা ব্যক্তির কাছে পুলিশের পরিচয়পত্র দেখতে চান। তিনি তখন পুলিশের পরিচয় দেখাতে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য নন বলে জনতার কাছে স্বীকার করেন। এতে উত্তেজিত জনতা তাকে আটকে রেখে মারধর করেন।
খবর পেয়ে কেসের মোড় থেকে এসআই ইউনুছ আলী তার সঙ্গীকে রক্ষা করতে বাঁশি বাজাতে-বাজাতে হালির মোড়ে ছুটে আসেন। তখন উত্তেজিত জনতা পুলিশের রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরা ব্যক্তি পুলিশ কি না তা এসআই ইউনুছ আলীর কাছে জানতে চান। এসআই ইউনুছ আলী ওই ব্যক্তিকে পুলিশ বলে পরিচয় দেন। এতে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা এসআই ইউনুছ আলীকেও কিল-ঘুষি মারতেশুরু করেন।
এক পর্যায়ে থানা পুলিশের একটি দল তাদের দুজনকে উদ্ধার করতে এসে উপস্থিত জনতার রোষানলে পড়েন। থানা পুলিশ রাত নয়টার পর তাদের দুজনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
এসআই ইউনুছ আলী বলেন, পারভেজ পুলিশের সোর্সের কাজ করেন। আমি তাকে ডেকে আনিনি। পুলিশের রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরে মোটরসাইকেল ধাওয়া করতে গিয়ে লোকজনের হাতে ধরা পড়েছিল। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে আমিও উত্তেজিত জনতার মারধরের শিকার হয়েছি।
ওসি মইনুল ইসলাম বলেন, আমি সাক্ষী দিতে গিয়েছিলাম। থানায় পৌঁছে নকল পুলিশ আটকের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে উদ্ধার করে এনেছি। যে ভ্যান আটকিয়ে রেখেছিল সেই ভ্যানচালক বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন।
আল মামুন/এফএ/এএসএম