বাবা-মা দুজনই প্রতিবন্ধী, দুই শিশুর মানবেতর জীবন
জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা বেগম। হাঁটতে পারেন না। স্বামী দেলোয়ার হোসেনও পঙ্গু। তিন মাস আগে ক্যানসারজনিত কারণে একটি পায়ের হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। বাবা-মা দুজনই প্রতিবন্ধী হওয়ায় অসহায় অবস্থায় দিন পার করছে দুই শিশুসন্তান। তাদের শৈশবের আনন্দটা ম্লান। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় চলে সংসার। কোন রকমভাবে খেয়ে পড়ে বেচে আছে পরিবারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হালাল সরদারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও একই গ্রামের হাতেম বেপারীর মেয়ে শাহিদা বেগম (৩০)। ১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। জন্মগতভাবে শাহিদা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। দুই পায়ে হাঁটতে পারেন না। পা দুটি সরু। সবসময় শুয়ে-বসে থাকতে হয়। এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জেনেও বিয়ে করেন দেলোয়ার হোসেন। শাহিদার বাবার বাড়িতেই ঘর তুলে থাকেন তারা। ভালোই যাচ্ছিল সংসার।
বিয়ের দুই বছর হতেই কোলজুড়ে আসে মেয়েসন্তান ফাতেমা আক্তার (৮)। ফাতেমা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। এরপর জন্ম হয় ছেলে সালমান হোসেনের (৪)। কয়েকমাস আগে দেলোয়ারের পায়ে ঘা হয়। সেই ঘা থেকে হয় ক্যানসার। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে তিন মাস আগে দেলোয়ারের একটি পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়। এরপরই তাদের সংসারে নেমে আসে ঘোর অমানিশা।
শাহিদা বেগম বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবে হাঁটতে পারি না। তা জেনে ও (দেলোয়ার) আমাকে বিয়ে করেছে। আল্লাহ আমাকে সুস্থ ও সুন্দর দুটি ছেলে-মেয়ে দিয়েছেন। ভালোই যাচ্ছিল আমাদের জীবন। কিন্তু আল্লাহ আমার স্বামীকে কঠিন অসুখ দিলো। পরে তার একটি পা কেটে ফেলতে হলো। এখন আমরা কীভাবে বাচবো তা আল্লাহ জানে। খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।’
একইভাবে হতাশার কথা বললেন শাহিদার স্বামী দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি পঙ্গু হয়ে গেছি। চিকিৎসা করাতে গিয়েও অনেক টাকা দেনা হয়ে গেছে। এখন আমি কী করবো, কীভাবে রোজগার করবো, আমাদের সংসার চলবে কীভাবে?’
শাহিদা-দেলোয়ার দম্পতির প্রতিবেশী সালাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের সাহায্য-সহযোগিতায় পরিবারটি কোনোরকম বেঁচে আছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? সত্যিকার অর্থে ওরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফজাল হোসাইন বলেন, তারা যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পান, তাহলে তাদের সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ক্যানসার আক্রান্ত হলেও সহযোগিতার সুযোগ আছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দরখাস্ত করলে তাদের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করা হবে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/জেআইএম