অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাবুলের মায়ের
একমাত্র ছেলে রাজনৈতিক মামলায় জেলে। পুত্রবধূ ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি কারাগারে বন্দি থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিনপার করছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধা মা শেফালী বেগম। অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূর চিকিৎসাতো দূরের কথা খেয়ে বেঁচে থাকাই যেন দায় হয়ে উঠেছে। সন্তান আর সংসারের দুশ্চিন্তায় দিশাহারা তিনি।
শেফালী বেগম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুটাপাড়া গ্রামের মৃত হানিফ শেখের স্ত্রী। একমাত্র ছেলে কাবুল শেখ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে কারাগারে রয়েছেন। ২১ অক্টোবর রাতে উপজেলার কুশলা বাজার থেকে কাবুলকে আটক করে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ। স্বামীকে নির্দোষ দাবি করে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কেয়া বেগমের।
জানা গেছে, টুটাপাড়া গ্রামের মৃত হানিফ শেখের ছেলে কাবুল শেখ এক সময় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর তিনি ছাত্র রাজনীতি বাদ দিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে স্থানীয় কুশলা বাজারে একটি মোবাইল ফ্ল্যাক্সিলোড ও ফটোকপির দোকান দেন। এই দোকানের আয় থেকে কাবুলের সংসার চলছিল।
২১ অক্টোবর বিকেলে দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে কুশলা বাজারের পাশ থেকে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ কাবুলকে গ্রেফতার করে। ওইদিন রাতেই স্বেচ্ছাসেবকদলের কেন্দ্রীয় নেতা দিদার হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে কাবুলকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
কাবুলের স্ত্রী কেয়া খানম বলেন, আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছে। আমার বয়স যখন দুই বছর তখন বাবা মারা যায়। অনেক কষ্টে মা আমাকে বড় করেন। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি টিউশনি করে সংসার চালাতাম। বিয়ের পর মা আমার সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। স্বামীর সামান্য আয়ে আমাদের সংসার চলতো। হঠাৎ আমার স্বামীকে হত্যা মামলার আসামি করে জেলে পাঠানোয় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগামী ১০ ডিসেম্বর আমার ডেলিভারি ডেট। ঘরে খাবার নেই। আশপাশের মানুষজন আমাদের কিছু কিছু খাবার দিচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে? আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই। তা না হলে বৃদ্ধা মা, শাশুড়ি ও গর্ভের সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার উপায় নেই।
প্রতিবেশী কৃষক মস্তফা মোড়ল বলেন, কাবুল একজন নিরীহ ছেলে। সে কখনোই কারো কোনো ক্ষতি করেনি। তাকে একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে থাকায় কাবুলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও শাশুড়ি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
কুশলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হোসেন বলেন, কাবুল কুশলা বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। বর্তমানে জেলে থাকায় কিস্তির টাকা ও দোকান ভাড়ার জন্য পাওনাদাররা কাবুলের মাকে চাপ দিচ্ছে। যেখানে কাবুলের পরিবার খেতেই পারছে না সেখানে কিস্তির টাকা ও দোকান ভাড়া পরিশোধ করবে কীভাবে?
কাবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এম নাসির আহমেদ বলেন, আগামী ২৮ নভেম্বর কাবুলের মামলার জামিনের শুনানি রয়েছে। আশা করি এদিন আদালতের কাছে কাবুল সুবিচার পাবে।
কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কাবুল শেখকে গ্রেফতার করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় পাঠাই। সদর থানা পুলিশ কাবুলকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা দিদার হত্যা মামলায় আটক দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
আশিক জামান অভি/এফএ/এএসএম