ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল

কোটি টাকার নষ্ট মেশিনে নীরব কর্তৃপক্ষ, হতাশ রোগীরা

জেলা প্রতিনিধি | গোপালগঞ্জ | প্রকাশিত: ১২:১৫ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

১০ বছর ধরে নষ্ট সরকারি হাসপাতালের ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) মেশিন। ৪ বছর ধরে নষ্ট সিটিস্ক্যান মেশিন। আর ফিল্ম না থাকার অজুহাতে দীর্ঘদিন বন্ধ এক্স-রে মেশিন। কোটি টাকা মূল্যের এসব যন্ত্রপাতি দিনের পর দিন অকেজো পড়ে থাকলেও মেশিনগুলো চালুর তেমন কোনো উদ্যেগ নেই কর্তৃপক্ষের।

শুধু তাই নয় ২৫০ শয্যার হাসপাতালের রেডিওলোজি ও ইমেজিং বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম ও ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফি (ইসিজি) ছাড়া সরকারি সুবিধায় মেলে না আর কোনো পরীক্ষা। এমন অবস্থায় সামর্থ্যবানরা বেশি খরচে বেসরকারিভাবে পরীক্ষা করলেও বিপাকে পড়ছেন গরিব রোগীরা।

এমন চিত্র গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেশিনগুলো মেরামতের খরচ প্রায় ক্রয়ের সমান। তাই সেগুলো চালুর উদ্যোগ নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলাসহ আশপাশের জেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এই হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। এমআরআই ও সিটিস্ক্যান এই পরীক্ষা দুটি করতে সরকারিভাবে ধরনভেদে রোগী প্রতি দুই থেকে চার হাজার টাকা লাগে। আর বেসরকারি কেন্দ্রে গেলে রোগীকে গুনতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। বছরের পর বছর কয়েক কোটি টাকার এই গুরুত্বপূর্ণ মেশিন দুটি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অন্যদিকে ফিল্ম না থাকার অযুহাতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ এক্স-রে মেশিনটিও। এ কারণে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে করাচ্ছেন পরীক্ষা।

কোটি টাকার নষ্ট মেশিনে নীরব কর্তৃপক্ষ, হতাশ রোগীরা

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, একযুগ আগে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যায়ে রোগীর শরীরের ভেতরের কাঠামো ও অঙ্গের পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য আনা হয় এমআরআই মেশিনটি। এর পরের বছর আনা হয় সিটিস্ক্যান মেশিনটি। এমআরআই মেশিন চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় রোগীর পরীক্ষা-নীরিক্ষা। সিটিস্ক্যান মেশিন কয়েকবছর চালু থাকলেও গত ৫ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতালটিতে রয়েছে শুধুমাত্র আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষা। এতে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন রোগীরা। এমআরআই ও সিটিস্ক্যান মেশিন দুটি সচল থাকা অবস্থায় দৈনিক গড়ে ১০ জন রোগী সেবা নিতে পারতেন।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলোজি ও ইমেজিং বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন অসংখ্য রোগীর স্বজন। কেউ সিটিস্ক্যান, কেউ এমআরআই, আবার কেউ এসেছেন আলট্রাসোনোগ্রাম ও ইসিজি করাতে। আলট্রাসোনোগ্রাম ও ইসিজি পরিক্ষা ছাড়া করাতে পারছেন না আর কোনো পরীক্ষা। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের।

বিভাগের ভেতর প্রবেশ করেই দেখা মিললো এক্স-রে পরীক্ষার কক্ষ। ভেতরে বসে আছেন এক্স-রে মেশিন অপারেটর। কাজ না থাকায় বেকার সময় কাটছে তার। একটু সামনে যেতেই দেখা গেলো সিটিস্ক্যান ও এমআরআই পরীক্ষা কক্ষের। সেখানে গিয়ে ভূতুড়ে অবস্থা দেখা গেলো কক্ষ দুটির।

হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা করতে আসা হালিমা বেগম নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার ভাই এই হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তার তাকে এমআরআই পরীক্ষার কথা বলেছে। হাসপাতালের এই বিভাগে এসে দেখলাম আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি ছাড়া আর কিছু করা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে খুলনা যাবো এমআরআই করাতে।

কোটি টাকার নষ্ট মেশিনে নীরব কর্তৃপক্ষ, হতাশ রোগীরা

বিউটি নামে আরেক রোগীর স্বজন বলেন, আমি এক্স-রে’র জন্য এসেছিলাম। আমাকে বলছে ফিল্ম নাই, এখানে এক্স-রে হবে না। বাধ্য হয়ে সরকারি মূল্য ২০০ টাকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দিয়ে এক্স-রে পরীক্ষা করাতে হয়েছে।

এ বিষয়ে বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও বিভাগ ইনচার্জ প্রশান্ত কুমার বাড়ৈ বলেন, বিভাগটিতে বর্তমানে আলট্রাসোনোগ্রাম ও ইসিজি হচ্ছে। বাকি পরীক্ষাগুলো হচ্ছে না। এমআরআই মেশিন নষ্ট হওয়ার পর নানা জটিলতায় আর তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জ্বীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ১০ বছর ও ৪ বছর ধরে বন্ধ এমআরআই ও সিটিস্ক্যান মেশিন দুটি নষ্ট। আর এক্স-রে মেশিনের ফিল্ম না থাকায় চালু করছি না। এমআরআই মেশিন নষ্ট হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটির কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিল। তবে ওই কোম্পানি বছরে ৫০ লাখ টাকা চেয়েছিল। বাজেট না থাকায় সেটি আর করা হয়নি। আর এখন সিটিস্ক্যান ও এমআরআই মেশিন মেরামতে যে খরচ হবে সেটি দিয়ে আমরা আরও ভালো মেশিন ক্রয় করতে পারবো।

এক্স-রে মেশিনের বিষয়ে বলেন, ফিল্ম না থাকায় আমরা মেশিনটি চালু করতে পারছি না। আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আমাদের টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। যার কারণে নতুন করে ফিল্ম কিনতে পারছি না। একারণেই বন্ধ আছে মেশিনটি।

আশিক জামান অভি/এফএ/এমএস