সেন্টমার্টিনে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ দোকানপাট বন্ধ
সেন্টমার্টিনে পর্যটকের পদচারণা না থাকায় হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ অধিকাংশ দোকান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ কর্মহীন। সরকারি নানা বিধি-নিষেধে দ্বীপে পর্যটক আসা-যাওয়া এখনো বন্ধ।
সেন্টমার্টিনের শুঁটকি ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ধারদেনা করে দোকানে বিভিন্ন জাতের শুঁটকি তুলেছি। আজও দ্বীপে কোনো পর্যটকের দেখা মিলেনি। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। কী করে ধারদেনার এতো টাকা পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না। দোকান আপাতত বন্ধ করে রেখেছি। এখন বেকার সময় কাটাচ্ছি। দ্বীপে পর্যটক না আসলে আমরা চলতে পারি না। আমরা যারা মাছের ব্যবসা করি সব মাছ পর্যটকদের বিক্রি করি। স্থানীয়দের কাছে শুঁটকি মাছের চাহিদা কম। তারা নিজেরা বেশিরভাগ দরিদ্র।
সেন্টমার্টিনের ভ্যানচালক আহসান উল্লাহ বলেন, গত বছর পর্যটক মৌসুমে ভ্যান চালিয়ে মোটামুটি সংসার চালানোর মত টাকা ইনকাম করেছিলাম। পরে সে টাকায় ৬-৭ মাস সংসার চলছে। এখন তো কোনো পর্যটক দ্বীপে নাই। তাই কর্মহীন হয়ে পড়েছি। বড়শি নিয়ে ঘাটে মাছ ধরে কোনো রকম সংসারের খরচ ও ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচের টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছি।
সেন্টমার্টিন হোটেল মারমেইড রিসোর্টের পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, হোটেলটা এখনো বন্ধ, পর্যটক না আসলে হোটেলে থাকার মত লোকজন নাই। দ্বীপের আরও অন্যান্য হোটেলও বন্ধ রয়েছে। নিজের সংসারের খরচ, হোটেল কর্মচারীর খরচ চালাতে হচ্ছে। খরচ পোষাতে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছি। দ্বীপের অনেক যুবক এখন কর্মহীন সময় পার করছেন। বর্তমানে খুব কষ্টে আছি আমরা।
এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনের বাজারসহ প্রতি সাগরের চারপাশের বিচ পয়েন্টে আগে পর্যটকসহ স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষে ভরপুর ছিল। এখন এক ধরনের সুনসান নীরবতা। দ্বীপে পর্যটকের না থাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। ফলে বেকার সময় পার করছেন কর্মজীবী মানুষ।
দ্বীপে যেসব মুদি, শুঁটকি ও তরিতরকারি দোকান রয়েছে সেখানে তেমন বেচা-কেনা নেই। ভ্যান ও বাইসাইকেলে ও মোটরসাইকেল চালকরা একদম কর্মহীন। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে যারা কোনোদিন সাগরে মাছ ধরতে যায়নি তাদের সংসারের অভাবের কারণে সাগরে মাছ ধরছেন। ঘাটে গিয়ে বড়শি ফেলছেন। অনেক পরিবার ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। লজ্জায় তারা নিজের ঘরের অভাবের কথা প্রকাশ করতে পারছে না। সাগরের মাছ ধরেও জেলেরা ও মাছ ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে এ বছর পর্যটক আসতে নানান সরকারি বিধিনিষেধ। পর্যটন মৌসুমের দুইমাস পেরিয়ে গেছে এখনো দ্বীপে পর্যটক আসার কোনো আশারা আলো দেখা যাচ্ছে না।
অপরদিকে জানা গেছে, পর্যটন মৌসুম শুরু হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণের নানান বিধিনিষেধসহ মিয়ানমার রাখাইন সীমান্তে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করছে না। আবার ইনানী জেটিঘাট দিয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের কথা থাকলেও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে জেটির কিছুটা অংশ ভেঙে পড়ায় তাতেও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আবার নতুন করে কক্সবাজার নুনিয়াছড়া জেটিঘাট দিয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দবাদ নামে একটি জাহাজ যাওয়ার কথা রয়েছে।
সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলের বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী কেয়ারি সিন্দাবাদ নামে একটি জাহাজকে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। দ্বীপে কখন জাহাজ যাবে সেটি চূড়ান্ত করবে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। এ কমিটি আগামী কাল বৈঠক রয়েছে সেখানে সিদ্ধান্ত হবে কখন কোন ঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচল করবে।
জাহাঙ্গীর আলম/আরএইচ/এমএস