পরীক্ষা না করায় শতবর্ষী রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছিঁড়ে ফেললেন চিকিৎসক
শতবর্ষী কুলসুমা বেগমকে নিয়ে সিলেটের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এম এম জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত চেম্বার গিয়েছিলেন তার স্বজনরা। এসময় তিনি রোগীকে দেখে ব্যবস্থাপত্রে কোনো ওষুধ না লিখে ৫-৬টি পরীক্ষা করাতে বলেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরা পরীক্ষা না করিয়ে ওষুধ লিখা যায় কি না, জানতে চাইলে রোগীর হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন চিকিৎসক। পরে তাদের অপদস্থ করে চেম্বার থেকে বের করে দেন।
রোববার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিলেট নগরীর মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধা রোগী সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।
অভিযুক্ত চিকিৎসক এম এম জাহাঙ্গীর আলম সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বক্তব্য নিতে তার ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি।
বৃদ্ধা কুলসুমা বেগমের ছেলে আব্দুল বাছিত বলেন, ব্যবস্থাপত্র ছিঁড়ে ফেলার পরও পুনরায় লিখে দিতে চিকিৎককে অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু তিনি কোনো সায় না দিয়ে চেস্বার থেকে বের হতে বলেন। একপর্যায়ে তাদের ভিজিট (ফি) ফেরত দিয়ে চলে যেতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক চেম্বার থেকে বের করে দেওয়ায় বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। পরে তিনি ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. এস এম হাবিবুল্লাহ সেলিমের কাছে নিয়ে যান। তিনি কোনো পরীক্ষা না দিয়ে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে দেন।
কুলসুমা বেগমের নাতি জাহিদুল হক বলেন, ‘শতবর্ষী একজন রোগীকে এভাবে চেম্বার থেকে বের করে দিয়ে ওই চিকিৎসক জঘন্যতম কাজ করেছেন। অথচ আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কোনো পরীক্ষা না করিয়ে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে দিয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে চিকিৎসক চুক্তিবদ্ধ।’
মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করা অন্য চিকিৎসকের এক সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই চিকিৎসক অনেক রোগীর সঙ্গে এভাবে দুর্ব্যবহার করেন। এ নিয়ে রোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে জিম্মি থাকায় কেউ কথা বলেন না।
এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘ওই চিকিৎসক ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধীনে। যতটুকু জানি তিনি ভালো চিকিৎসক। কিন্তু ঘটনাটি সত্যি হলে এটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করার নেই।’
স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘এটা উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এ বিষয়ে মন্তব্য না করাই ভালো। তিনি একজন সিনিয়র চিকিৎসক। ওই রোগীও একজন বয়স্ক নাগরিক। কেন এমনটা হলো বোঝা যাচ্ছে না। তবে ঘটনা সত্য হলে সেটা খুবই খারাপ বিষয়।’
আহমেদ জামিল/এসআর/জিকেএস