ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

এমপিওভুক্তিতেও রেকর্ড

দুই মায়ের নামে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় খুলে লোক ঠকাতেন নুরুজ্জামান

জেলা প্রতিনিধি | লালমনিরহাট | প্রকাশিত: ০৭:৩৮ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায়। তার মা ভক্তির গল্পটা একেবারেই ভিন্ন। এমনটা সাধারণত দেখা যায় না। নিজের জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে সৎমায়ের প্রতিও আছে তার অগাধ ভালোবাসা। এজন্য দুই মায়ের নামে করেছেন একটি বিদ্যালয়। তাও আবার সমাজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য। নাম দিয়েছেন করিমপুর নূরজাহান-সামছুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি আবার এমপিওভুক্তও করেছেন। জানা গেছে, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তিতে এটাই প্রথম, এমন রেকর্ড আর নেই।

এখানেই থামেননি নুরুজ্জামান, সমাজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য অন্যত্র একাধিক হোস্টেলের ব্যবস্থাও করেছেন। স্থানীয়দের দাবি, নুরুজ্জামানের দৃশ্যমান এ উদ্যোগকে মহৎ বলতেই হবে। কিন্তু এর নেপথ্যে রয়েছে নিরীহ মানুষের টাকা-জমি লুটের বাসনা। দুই মায়ের নামে বিদ্যালয় খুলে লোক ঠকাতেন নুরুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যরা।

বিদ্যালয়েটিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে মন্ত্রী ও তার ভাই হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা ও কয়েক একর জমি। টাকা কিংবা জমি দিয়েও চাকরি না পাওয়ার বিস্তর অভিযোগ আছে ভুক্তভোগীদের। পাঠদানের বালাই না থাকলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বিশেষ ক্ষমতায় দেশের একমাত্র করিমপুর নূরজাহান-সামছুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনিয়ম দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সরকারি জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে সাবেক এ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সপরিবারে গাঢাকা দেন নুরুজ্জামান।

সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও তার ছোট ভাই শামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুসাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও তার ছোট ভাই শামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টু

এরপর ঢাকা, রংপুরসহ তিনটি হত্যা মামলার আসামি হন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার ছেলে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ। এরপর থেকে তারা আত্মগোপনে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী থাকাকালীন বিশেষ ক্ষমতায় দুই মায়ের নামে গড়ে তুলেছেন একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। সেখানেও নানান দুর্নীতি-অনিয়মের আখড়া বিদ্যালয়টি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানে চাকরির নামে টাকাসহ জমি লিখে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে সাবেক মন্ত্রীর আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে। নেপথ্যে মন্ত্রী আছেন তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের দুই মা। একজনের নাম নূরজাহান আহমেদ (আপন মা), অপরজন সামছুন্নাহার আহমেদ (সৎমা)। দুই মায়ের স্মৃতি সংরক্ষণে নিজ গ্রাম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের করিমপুরে ২০১৫ সালে শুধু বুদ্ধি, শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য গড়ে তুলেছেন করিমপুর নূরজাহান-সামছুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। দুই মায়ের নামে গড়ে তোলা এ বিদ্যালয়কে বানানো হয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী থাকাকালীন বিশেষ ক্ষমতায় দুই মায়ের নামে গড়ে তুলেছেন একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। সেখানেও নানান দুর্নীতি-অনিয়মের আখড়া বিদ্যালয়টি। নিয়ম-নীতিরও তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানে চাকরির নামে টাকাসহ জমি লিখে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে সাবেক মন্ত্রীর আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে। নেপথ্যে মন্ত্রী আছেন তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

বিদ্যালয়েটিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে মন্ত্রী ও তার ভাই হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা ও কয়েক একর জমি। টাকা কিংবা জমি দিয়েও চাকরি না পাওয়ার বিস্তর অভিযোগ আছে ভুক্তভোগীদের। পাঠদানের বালাই না থাকলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বিশেষ ক্ষমতায় দেশের একমাত্র করিমপুর নূরজাহান-সামছুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

কার্যক্রম নেই, এভাবেই পড়ে আছে অবকাঠামো-ছবি জাগো নিউজকার্যক্রম নেই, এভাবেই পড়ে আছে অবকাঠামো-ছবি জাগো নিউজ

প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে পরিচালিত হয়, যা কোনো নিবন্ধিত সংস্থার ব্যানারে গড়ে ওঠে। এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্থে গড়ে তোলেন নূরজাহান-সামছুন্নাহার উন্নয়ন সংস্থা। যার সভাপতি করা হয় মন্ত্রীর ছোট ভাই শামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুকে। পদাধিকার বলে তিনিই বিদ্যালয়ের সভাপতি হন। তার স্ত্রী জেসমিন আখতার পলির বয়স যাই হোক বিশেষ ক্ষমতায় করা হয় প্রধান শিক্ষক।

এই সংস্থা আর বিদ্যালয় পেয়ে যেন টাকশাল পেয়ে যান মন্ত্রীর ছোট ভাই শামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টু। এক সংস্থার ব্যানার দেখিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বড় বড় প্রজেক্ট বাগিয়ে নিয়ে কমিশনে বিক্রি করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান ভুট্টু।

প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে পরিচালিত হয়, যা কোনো নিবন্ধিত সংস্থার ব্যানারে গড়ে ওঠে। এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্থে গড়ে তোলেন নূরজাহান-সামছুন্নাহার উন্নয়ন সংস্থা। যার সভাপতি করা হয় মন্ত্রীর ছোট ভাই শামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুকে। পদাধিকার বলে তিনিই বিদ্যালয়ের সভাপতি হন আর তার স্ত্রী জেসমিন আখতার পলির বয়স যাই হোক বিশেষ ক্ষমতায় করা হয় প্রধান শিক্ষক।

অভিযোগ আছে, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক-কর্মচারীরা টাকা খরচ করে ও কায়িক শ্রম দিয়ে বিদ্যালয়টি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু এমপিওভুক্তির জন্য চাহিদামতো অর্থের জোগান দিতে না পারায় অনেক শিক্ষক-কর্মচারীকে বাদ দেওয়া হয় এমপিও শিটে। টাকার জোরে অনেক নতুন নামও অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে কেউ বিদ্যালয়ে যোগদান না করেও তিন মাসের বেতন-ভাতা পেয়েছেন। অপরদিকে দীর্ঘ ৮ বছর নিজের টাকা খরচ করে ও পরিশ্রম করেও বিনা নোটিশে চাকরি হারিয়েছেন কেউ কেউ।

এমন একজন সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) মোহাইমেনুল হাসান প্রতিকার চেয়ে গত ৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক মোহাইমেনুল হাসান জানান, করিমপুর নূরজাহান-সামছুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে সভাপতি মন্ত্রীর ভাই শামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টু তার বাবা আজিজুল ইসলামের কাছ থেকে ৫৪ শতাংশ জমি লিখে নেন। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর যোগদানপত্র নিয়ে নিয়মিত চাকরি করে আসছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এমপিওভুক্ত হলে তার পদে রঞ্জু মিয়া নামে একজন নতুন শিক্ষকের নাম আসে। এমপিও প্রকাশের পরদিন থেকে ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাতায়াত শুরু করেন। পরে টাকা ও জমি ফেরত দাবি করলে মোহাইমুনুল হাসানকে মেরে ফেলার হুমকি দেন মন্ত্রীর ভাই ভুট্টু।

হোস্টেলের ফলক-ছবি জাগো নিউজহোস্টেলের ফলক-ছবি জাগো নিউজ

বিদ্যালয়টির ওপর কয়েকজন শিক্ষক রবিউল ইসলাম, জবা রানী ও হাসিনা বেগম শিক্ষাসহায়ক পদে প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে চাকরি করলেও এমপিওতে তাদের নাম নেই। অফিস সহকারী পদে শুরু থেকে চাকরি করা রেখা খাতুনকে পদ পরিবর্তন করে করা হয় শিক্ষাসহায়ক (আয়া) আর অফিস সহকারী পদে নাম আসে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লিটন মিয়ার বোন হালিমা বেগমের। অপরদিকে এমএ পাস হরিদাস সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেও এমপিওতে নাম আসে শিক্ষাসহায়ক (আয়া) পদে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জেসমিন আখতার পলি ঢাকায় বসবাস করলেও নিয়মিত বিদ্যালয়ে হাজির দেখানো হয়। দেশের প্রেক্ষাপট বদলে গেলে চাকরি বাঁচাতে রংপুরে চলে আসেন তিনি। প্রধান শিক্ষকসহ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে প্রতিবন্ধী ধরন (বুদ্ধি, বাক ও দৃষ্টি) বিষয়ক ছয় মাসের বিশেষ প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ আবশ্যক হলেও এ বিদ্যালয়ের কারও প্রশিক্ষণ সনদ নেই। তবে পট পরিবর্তন হওয়ায় সবাই ভর্তি হয়েছেন সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এমনটা দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আখতার পলির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় দুশ জনের মতো শিক্ষার্থী ছিল, পরে কমে গেছে। তবে কাগজে-কলমে ২২৩ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই শামছুজ্জামান আহমেদ ভুট্টু সম্প্রতি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে রংপুর কারাগারে।

এখানেই শেষ নয়, সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালে সেই হোস্টেল দুটিও নির্মাণ করা হয় নুরুজ্জামানের নিজ উপজেলা কালীগঞ্জে। একটি বালক হোস্টেল এবং অপরটি বালিকা হোস্টেল। বালক হোস্টেল করা হয় মন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত করিমপুর নূরজাহান-সামছুন্নাহার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় চত্বরে। আর বালিকা হোস্টেলটি নির্মাণ করা হয় করিম উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে। যার প্রধান শিক্ষক মন্ত্রীর ভাই খুরশীদুজ্জামান আহমেদ।

মোহাইমেনুল হাসানের অভিযোগ-ছবি জাগো নিউজমোহাইমেনুল হাসানের অভিযোগ-ছবি জাগো নিউজ

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ করা হলেও তাতে কোনো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নেই। বালক হোস্টেল ব্যবহার হচ্ছে নুরুজ্জামানের মায়েদের নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের অফিস হিসেবে। বালিকা হোস্টেল ব্যবহার করছে মন্ত্রীর ভাইয়ের বিদ্যালয়। যে কারণে হোস্টেল নির্মাণ করা হলেও তার জনবল নিয়োগ দেননি সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

বিদ্যালয় ও সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হোস্টেলের তথ্য জানতে চাইলে লালমনিরহাট সমাজসেবা অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন, এ বিষয়ে অফিসে কোনো ফাইল নেই। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টিরও কোনো নথি নেই আমাদের কাছে। বিগত দিনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারাই বিষয়টি জানেন।

এদিকে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদে নামে তিনটি হত্যা মামলা থাকায় তিনি পলাতক। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরওআই/এসএইচএস/জিকেএস