সস্তায় ঘোড়া মেলে জামালপুরের যে হাটে
জামালপুরের সদর উপজেলার রশিদপুর ইউনিয়নের তুলসীপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠটি বিশেষভাবে পরিচিত ঘোড়া বেচাকেনার কারণে। ৫২ বছর ধরে এই মাঠে বসছে ঘোড়ার হাট। প্রতি বৃহস্পতিবার এ হাটে আমদানি হয় দেশি, মিশ্র ও তাজি জাতের পাঁচ শতাধিক ঘোড়া। ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে কেনাবেচা হয় ঘোড়ার গাড়ি, লাগামসহ নানান সরঞ্জাম।
সম্প্রতি হাটে গিয়ে দেখা যায়, শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ঘোড়ার হাটে হরেকরকমের ঘোড়া আমদানি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ঘোড়াগুলোকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।
দাম তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার ও ঘোড় সওয়ারি এ হাট থেকে কিনে নেন পছন্দের ঘোড়াটি। আট হাজার থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকা দামের ঘোড়া পাওয়া যায় এ হাটে। তবে বেশি পাওয়া যায় টাট্টু, খাসি, বাহাদুর, রাজা, তাজিয়া, পারলে ঠেকাও, বিজলি, রানি, রাজ ও কিরণমালা নামের বিশেষ ঘোড়া। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গাড়ি চালানোর ঘোড়া।
গাড়ির ঘোড়ার শক্তি পরীক্ষা করার জন্য রয়েছে ‘রিমান্ডের’ ব্যবস্থা (বিশেষ ব্যবস্থা)। রিমান্ডে যে ঘোড়া সবচেয়ে বেশি শক্তি দেখাবে, সেটি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। ঘোড়ার রিমান্ডের জন্য হাটের ভেতর তৈরি করা আছে কর্দমাক্ত ও পানির রাস্তা, বালুর রাস্তা, উঁচু-নিচু খাদ। সেই রাস্তায় ১৭-১৮ জন মানুষ উঠিয়ে ঘোড়ার গাড়ি টানা হয়। যে ঘোড়া বালু ও পানির মধ্যে গাড়ি টেনে নিতে সক্ষম হয়, সেটির শক্তি বেশি বলে বিবেচিত হয়।
এর পাশাপাশি শক্তি পরীক্ষার জন্য ঘোড়াকে উঁচু পাড় বেয়ে ওঠানামা করানো হয়। একটি ঘোড়া হাট থেকে বেচাকেনা হলে প্রতি হাজারে ৫০ টাকা করে খাজনা দিতে হয় হাট পরিচালনাকারীদের।
ঘোড়া বিক্রি করতে আসা রুহুল আমিন, কালাম, শফিক, আবু ও জয় জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার বাজারই ভালো না। একবারেই দাম কম। ভালো দাম পেলে ঘোড়া বিক্রি করে দেবো।’
গাড়িতে করে হাটে ঘোড়া নিয়ে আসেন শফিকুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি হাটেই ঘোড়া নিয়ে আসি। সারাদিন বেচাকেনা বেশ ভালো হয়।’
হাটে পান-সিগারেট বিক্রি করেন নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বহু আগে থেকেই কলেজ মাঠে ঘোড়ার হাট বসছে। সেই সুবাদে এখানে আমার বেচাকেনাও ভালো।’
হাটে জামালপুরের পাশাপাশি সিলেট, ঢাকা, গাজীপুর, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন বলে জানান হাট পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য মিজানুর রহমান।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, ৫০ বছর ধরে হাটটি বসছে। প্রতি হাটে আমাদের চিকিৎসকরা থাকেন। ঘোড়ার কোনো চিকিৎসা লাগলে তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া হয়। এছাড়া ঘোড়া লালন-পালনে যত রকম কারিগরি সহযোগিতা দরকার, আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে দেওয়া হচ্ছে।
এসআর/জিকেএস