বেনাপোলে ১০ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৬১ কোটি টাকা
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১৪৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আহরণ হয়েছে ২৬১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১৯০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগস্টে ২৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আর আহরণ হয়েছে ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অক্টোবরে ২৪৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৩২ কোটি ২১ লাখ টাকা।
নভেম্বরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ২১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৭ কোটি ৭৯ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। জানুয়ারি মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা আর আদায় হয়েছে ২০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
ফেরুয়ারি মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪০ কোটি টাকা সেখানে আহরণ হয়েছে ২২০ কোটি টাকা। মার্চ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫৫ কোটি টাকা আর আহরণ হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা এবং এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪০ কোটি টাকা সেখানে আহরণ হয়েছে ২২০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে গিয়ে আমদানি করা সব পণ্যের শুল্ক মূল্য কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি নানামুখি হয়রানির ফলে আমদানিকারকরা ব্যবসায়িক সুবিধার্থে বেনাপোল ছেড়ে পার্শ্ববর্তী মংলা, হিলি, সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন। ফলে বেনাপোল কাস্টমসে দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি।
জানা গেছে, বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে আগে প্রতি দিন ৫০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো। বর্তমানে আমদানি হচ্ছে তার অর্ধেকের কম। গত ৬ মাসে আনুমানিক ১০ হাজার টন পণ্য কম আমদানি হয়েছে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন জানান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আগে প্রতিদিন আমরা প্রায় ৫০০ ট্রাক পণ্য পরিবহন করতাম। এখন তা কমে এসেছে ২০০ ট্রাকে। কাজ না থাকায় অফিসের স্টাফরা এখান থেকে চলে যাচ্ছেন।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান জানান, গত বছরের অস্থিতিশীলতার প্রভাব এখনও থেকে গেছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। যে কারণে তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। আবার মালামাল বিক্রি কমে যাওয়ার কারণেও ব্যবসায়ীরা পণ্য কম আনছেন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন শিমুল জানান, মূলত আমদানি কমে যাওয়ার কারণে রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়েছে। বেনাপোল কাস্টমস কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আমদানি করা পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি এবং ইচ্ছামতো এইচএস কোড পরিবর্তন করছেন। যে কারণে আমদানিকারকরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন।
কাস্টমস কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ খান বলেন, আগে এই বন্দর দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেয়া হতো। কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই। তাছাড়া উচ্চ শুল্কযুক্ত ১৩ হাজার মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হওয়ার কারণে রাজস্ব আহরণ কমে গেছে। আশা করছি, সামনের মাসগুলোতে এটি পূরণ হয়ে যাবে।
জামাল হোসেন/এসএস/আরআইপি