সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার অপরাধে তনুকে হত্যা
কুমিল্লা সেনানিবাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তনু অংশ না নেয়ার অপরাধে তাকে সেনাবাহিনীর লোকজনই হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন তার মা আনোয়ারা বেগম।
মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে প্রবেশের আগে অপেক্ষমান গণমাধ্যম কর্মীদের এসব তথ্য জানান তিনি।
আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সেনা ইউনিটের অনুষ্ঠানে গান না করায় তার মেয়েকে হত্যা করা হয়। তার চুল কেটে দেয়া হয়, হত্যার পর সেনাবাহিনীর লোকজন তার মেয়ের মরদেহ বাড়ির কাছে ফেলে যায়। এসময় তিনি দুই সেনা সদস্যের নাম উল্লেখ করেন। হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অ্যালবাম নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়। ঘটনার আড়াল করার চেষ্টা করছে ওরা।’
আনোয়ারা বেগম আরো বলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদের বাসায় আমার মেয়ে টিউশনি করতো। ওই সুবাদে তাদের সঙ্গে তনুর পরিচয় ছিল। এরপর থেকে সেনানিবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান গায় তনু। গত ১৭-১৮ মার্চ সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে তনুর গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তনু তার কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে শিক্ষা সফরে চলে যাবে, তাই সে সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছিল।`
`সেখান থেকে ফিরে আসার পর ২০ মার্চ বিকেলে টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামে এক মেয়ের মাধ্যমে ডেকে নেয় সিপাহী জাহিদ। এরপর রাতে মেয়ের মরদেহ সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায়। বাসায় তনুকে খুন করে তিন ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ রেখে মরদেহ জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়।
এদিকে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, `আমাদের বিভিন্ন স্থানে ডেকে এনে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলা তদন্তে কোনো অগ্রগতি কিংবা ঘাতক ধরা না পড়লেও বার বার আমাদের তনুর বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে। মামলার অগ্রগতি ও তদন্তকারী সংস্থার কার্যক্রমে আমরা হতাশ।`
তিনি আরো বলেন, `আমার মেয়ের শরীরে এতো আঘাত ছিল। এছাড়া চুল কেটে নেয়া হয়েছে। এরপরও ডাক্তাররা মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।`
অন্যদিকে, হঠাৎ করেই সেনাবাহিনীর বিষয়ে তনুর মায়ের এমন বক্তব্য বিভিন্ন অনলাইন ও টিভি চ্যানেল প্রচারের পর বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এর আগে বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তনুর বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা সিআইডি কার্যালয়ে অবস্থান করেন। এসময় সিআইডি কার্যালয়ে তনুর বাবা, মা, ভাই ও সহপাঠীসহ ১০ জনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দল। এর আগে তনুর পরিবারকে আরো সাত দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিআইডি-ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে পরিদর্শক গোলাম মাওলাসহ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দলটি ঢাকা থেকে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে পৌঁছেন। বিকেলের দিকে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, ছোট ভাই নাজমুল হোসেন, চাচাতো বেন লাইজু জাহান, সহপাঠি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান, শামীম ও তনুর সঙ্গে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনকারী স্থানীয় শিল্পী সোনিয়া সাহা ওরফে শান্তা, শিল্পী সারোয়ার আহমেদ রাসেল, নুরুল ইসলাম খোকনকে সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে চলে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে সিআইডি কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নামজুল করিম খাঁন বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলবার ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর বেশি তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাতে সোহাগী জাহান তনুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাউজ এলাকার একটি জঙলে মরদেহ ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা।
কামাল উদ্দিন/এআরএ/এবিএস