ভয়ংকর এক গডফাদার শামীম ওসমান
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সর্বমহলেই তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকতো। যে কেউ তার মতের বাইরে গেলেই তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকির শিকার হতে হতো। নিজ দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তার হয়রানি থেকে মুক্তি পেতেন না।
শামীম ওসমান প্রায় সময়ই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যেই অহংকার করে নিজের অস্ত্রবাজিসহ নানা অপকর্মের তুলে ধরতেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন মহলকে তার এসকল অপকর্মকে হাসিমুখে স্বীকার করে নিতে হতো। বিভিন্নভাবে তিনি নিজেকে একজন গডফাদার হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করে তুলেন। এই গডফাদারের তকমাকে বেশ উপভোগ করতেন তিনি।
যেভাবে গডফাদারের যাত্রা শুরু
২০০০ সালে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে জাহানারা ইমামের নামে একটি ভবন উদ্বোধনের পরই বদলে যায় নারায়ণগঞ্জের চিত্র। এর পরেই দ্রুত সব কিছু পাল্টে যায়। আর সেই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন এমপি শামীম ওসমান। তার দাবি ছিল সেদিনের অনুষ্ঠানের পরেই অনেক কিছুতে পরির্বতন এসেছিল। নারায়ণগঞ্জ বদলে গিয়েছিল। নতুন এক অধ্যায়ের সূচনার কারণেই পরবর্তীতে ‘গডফাদার’ উপাধি দেওয়া হয় তাকে।
আরও পড়ুন
স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালের ১৬ এপ্রিল সরকারি তোলারাম কলেজে জাহানারা ইমাম নামের একটি ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কলেজ প্রাঙ্গণে মুক্তমঞ্চের সমাবেশ থেকে রাজাকার, স্বাধীনতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করা হয়। সেদিন সমাবেশ শেষে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে নারায়ণগঞ্জে গোলাম আযম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। এরপরেই মূলত ওই এলাকার নামকরণ হয় সাইনবোর্ড। ওই সমাবেশের তিনদিন পর মুন্সিগঞ্জে একটি কর্মসূচি ছিল মতিউর রহমান নিজামীর। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি নিজামী।
আরও পড়ুন
- হত্যা মামলায় কারাগারে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ
- সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদের বাসা থেকে যা পেলো পুলিশ
এছাড়া ওই বছরেই নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতীকী বিচারে সাঈদী, গোলাম আযম ও নিজামীর ফাঁসি দেওয়া হয় প্রতীকীভাবেই। এ নিয়ে একাধিকবার শামীম ওসমান বলেছেন, প্রতিটি ক্রান্তি সময়ে নারায়ণগঞ্জ থেকেই ঘণ্টা বাজিয়েছি। জাহানারা ইমাম ভবন করে ঘণ্টা বাজিয়েছিলাম। গোলাম আযমকে নারায়ণগঞ্জের মাঠে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। সে কারণে গোলাম আযম আমিরগিরি ছেড়ে দেয়। আমি জামায়াত ও গোলাম আযমকে নিষিদ্ধ করেছিলাম। জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, জিয়াউর রহমানের গাড়ি আটকে দেওয়া, খালেদা জিয়ার লংমার্চ আটকে দেওয়ার কারণেই আমাকে গডফাদার উপাধি দেওয়া হয়। এসব কারণে আমি গডফাদার হলাম। জামায়াত-বিএনপি আর কিছু মিডিয়া আমাকে গডফাদার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
অস্ত্রবাজিতে নিজেরই স্বীকারোক্তি
২০২০ সালের ১ মার্চ পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২০’ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘২০০১ সালের আগে পুরো জেলা পুলিশের ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র ছিল, আমার কাছে এর চেয়ে বেশি অস্ত্র ছিল। মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু আজকে আমার গাড়িতেও অস্ত্র আছে কি না, আমি জানি না।’ পরবর্তীতে তার এই বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলের বেশ টনক নড়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত ১৯ জুলাই বিকেলে শহরের চাষাঢ়া বঙ্গবন্ধু সড়কে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। আর ওই মিছিলে শামীম ওসমান ও তার কয়েক শতাধিক অনুসারী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কে শহরের ২ নম্বর রেলগেইট এলাকার দিকে ধাওয়া দিয়েছিলেন।
সবশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত ১৯ জুলাই বিকেলে শহরের চাষাঢ়া বঙ্গবন্ধু সড়কে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। আর ওই মিছিলে শামীম ওসমান ও তার কয়েক শতাধিক অনুসারী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কে শহরের ২ নম্বর রেলগেইট এলাকার দিকে ধাওয়া দিয়েছিলেন।
হাতজোড় করে ক্ষমা চান শামীম ওসমান-ফাইল ছবি
সেখানে শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ (টিটু) গুলি ছোড়েন। শামীম ওসমানের আত্মীয় (অয়ন ওসমানের শ্বশুর) ফয়েজ উদ্দিন (লাভলু), তার ছেলে মিনহাজুল ইসলাম ও শীতল পরিবহনের বাসের পরিচালক অনুপ কুমার সাহা, ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিয়াজুল ইসলামকে দেখা গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছিল এই অস্ত্রের মহড়ার কথা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে শামীম ওসমান গর্ব করে বলেছেন।
ইবাদত নিয়ে লাগামহীন বক্তব্য
২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের হুঁশিয়ারি দেওয়া এক শ্রেণির মাওলানাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদেরকে আপনারা ইসলাম বুঝান আমরা কুরআন পড়ি না? ২২ বছর ধরে তাহাজ্জুদ ছাড়ি নাই। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ রাকাত নফল নামাজ বেশি পড়ি আল্লাহর রহমতে। দুবেলা কুরআন শরিফ পড়ি। ধর্ম সবার। ধর্মের জবাব আল্লাহর কাছে দেব; আর কারও কাছে না। কারও কাছ থেকে লাইসেন্স দিতে হবে আমার? আমি মুসলমান, আমি মুসলমান না। আপনারা লাইসেন্স দেবেন আমাদের? আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত করুক।’ তার এই বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জজুড়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল।
ডিসি-এসপিকে যেভাবে হুমকি দিতেন
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জে যত জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার এসেছেন সকলেরই যোগদানের পরপরই নামমাত্র বিভিন্ন ইস্যুতে বিশাল সমাবেশের ডাক দিতেন শামীম ওসমান। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে টানা মাসজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হতো। আর এই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডিসি এবং এসপিকে উদ্দেশ্য করে নিজের ক্ষমতার জানান দিয়ে বিভিন্নভাবে বক্তব্য রাখতেন। বক্তব্যে প্রত্যক্ষভাবে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতেন কিন্তু পরোক্ষভাবে ডিসি এসপিকে হুমকিতে রাখতেন।
আরও পড়ুন
সবশেষ ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ওসমানী স্টেডিয়ামে আয়োজিত অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন প্রত্যাশার আত্মপ্রকাশ ও মাদকের বিরুদ্ধে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কথা বলা হলেও এটা ছিলো শামীম ওসমানের স্ট্যান্টবাজি। এই মতবিনিময় সভাকে কেন্দ্র করে মাসজুড়েই বিভিন্ন সভা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো প্রশাসনকে নিজের অবস্থান জানান দেওয়া।
কিন্তু এই বিষয়টি তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বিষয়টি উপলব্ধি করেন। ফলে তারা দুইজনের কেউই উপস্থিত হননি। কিন্তু এই উপস্থিত না হওয়া নিয়ে শামীম ওসমান অনেক ক্ষোভ ঝাড়েন।
আরও পড়ুন
তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং ও ভূমিদস্যুতা বন্ধে আজকের এই আয়োজন। এখানে অংশ নিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম; এরপরও তারা আসেননি। তারা কেন আসেননি তা সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাইব। মনে রাখবেন আমার নাম শামীম ওসমান। আমি কারও দয়ায় চলি না। একই সাথে মতবিনিময় উপস্থিত হওয়া অন্যান্য বক্তাদের দিয়েও ডিসি এসপির বিরুদ্ধে বলানোর চেষ্টা করানো হয়।
টাকায় ভাগ বসাতেন স্ত্রী-পুত্র
নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় শামীম ওসমানের অন্যতম একজন খলিফা ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। এই মতির মাধ্যমে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও তেল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিশেষ করে আদমজী ইপিজেডের নিয়ন্ত্রক ছিলেন মতি। এই এলাকা থেকে যত টাকা আসতো তার থেকে ভাগ নিতেন তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি।
‘আমাদেরকে আপনারা ইসলাম বুঝান আমরা কুরআন পড়ি না? ২২ বছর ধরে তাহাজ্জুদ ছাড়ি নাই। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ রাকাত নফল নামাজ বেশি পড়ি আল্লাহর রহমতে। দুবেলা কুরআন শরিফ পড়ি। ধর্ম সবার। ধর্মের জবাব আল্লাহর কাছে দেব; আর কারও কাছে না। কারও কাছ থেকে লাইসেন্স দিতে হবে আমার?’ তার এই বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জজুড়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল।
এদিকে শহরের মাসদাইর এলাকার নিয়ন্ত্রক ছিলেন তার ছেলে অয়ন ওসমান। ছাত্রলীগের মহানগর সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও জেলা সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল অয়ন ওসমানের খলিফারূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তারা অয়ন ওসমানের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেই সাথে এসব জায়গা থেকে টাকার ভাগ নিতেন অয়ন ওসমান।
ডুবন্ত জনপদের নেতা শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। ডিএনডি বাঁধের ভেতরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হলে বাধের ভেতরে জলাবদ্ধতা কমে যাবে। দৃষ্টিনন্দন হবে ডিএনডি বাঁধের ভেতরের এলাকা। কিন্তু বাঁধের বাইরেও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতে দেখা দিয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। অনেক এলাকাতে বছরজুড়েই কৃত্রিম বন্যা থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ বছরের পর বছর ধরে এ সমস্যা থাকলেও সেগুলো সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেননি শামীম ওসমান। ফলে এই প্রভাবশালী শামীম ওসমানকে বলা হতো ডুবন্ত জনপদের নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই মাহমুদপুর, ভূইগড়, দেলপাড়া, নয়ামাটি, নুরবাগ, ইসদাইর, তল্লা, গাবতলী, লালপুর, পৌষারপুকুর পাড়, কোতালের বাগ, কুতুবআইল, লালখা, দাপা পাইলট স্কুল, রেল স্টেশন, পিলকুনী, ব্যাংক কলোনী, নন্দলালপুর সড়ক, দেলপাড়া কলেজ রোড, সস্তাপুর, ইসদাইর, কলেজ রোড, মাসদাইর বাজার, জামতলা, নাগবাড়ি, দেওভোগ, পাগলা শাহিবাজর, চিতাশাল, বিসিক শিল্প নগরী সহ ফতুল্লাঞ্চলের প্রায় এলাকা জলবদ্ধতার কবলে পড়ে থাকে।
আরও পড়ুন
- নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানসহ ২৩৯ জনের নামে মামলা
- শামীম ওসমানকে প্রধান করে ৯৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা
একই সাথে শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জের অন্যতম শিল্পাঞ্চল হচ্ছে ফতুল্লার বিসিক। এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কয়েক হাজার এবং শ্রমিকের সংখ্যা কয়েক লাখ। প্রতি বছর এই অঞ্চল থেকে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব পায়। অথচ এই অঞ্চলে কর্মরত শ্রমিকদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ডাইংয়ের কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি মাড়িয়েই কর্মক্ষেত্রে যেতে হয় কয়েক লাখ শ্রমিককে।
শামীম ওসমানের বাড়ির বর্তমান অবস্থা-ছবি জাগো নিউজ
১৫ বছরে ফুলেফেঁপে টাকার কুমির
২০২৪ সালে হলফনামায় শামীম ওসমান নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তার মোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৫টি। জ্বালানি তেল আমদানি পরিবহন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেড এন কর্পোরেশন, জেড এন শিপিং লাইনস লিমিটেড, মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক ও উইসজম নিটিং মিলসকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিগত দিনে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে দুদকের দু’টি মামলাসহ ১৭টি মামলা দায়ের হয়েছিল যার মধ্যে কয়েকটি মামলা হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত রয়েছে ও বেশ কিছু মামলা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং কয়েকটিতে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। শামীম ওসমান নিজের বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য খাত থেকে বাৎসরিক আয় করেন ৪ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৪ টাকা। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫২ টাকা ও স্ত্রী লিপি ওসমানের আয় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫২ টাকা, কন্যার আয় ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। শেয়ারের সঞ্চয়পত্র ও ব্যংক থেকে জামানত সুদ থেকে তার বাৎসরিক আয় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪১ টাকা ও স্ত্রীর আয় ২৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮৭ টাকা এবং কন্যার আয় ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯ টাকা। সম্মানি ভাতা পান পারিতোষিক ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানি পান ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। শামীম ওসমানের নগদ টাকা রয়েছে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯২ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১০ হাজার ৩৪৪ টাকা। ব্যাংকে নিজ নামে জমা রয়েছে ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৯ টাকা, কন্যার নামে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৬১৬ টাকা। শামীম ওসমানের নামে বন্ড ও শেয়ার রয়েছে জেড এন শিপিংয়ের নামে ১ কোটি, মাইশা এন্টারপ্রাইজের ৯৫ লাখ, উইসম নিটিংয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার, জেড এন কর্পোরেশনে ১ কোটি ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৪ টাকা, খান ব্রাদার্সে ২ লাখ ৫০ হাজার। স্ত্রীর নামে জেড এন শিপিংয়ের ৪২ লাখ, খান ব্রাদার্সের ২ লাখ ৫০ হাজার, জেড এন করপোরেশনের ১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। মেয়ের নামে খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেডে ২লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে। শামীম ওসমানের নামে এফডিআর রয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ১ হাজার ৬৪৬ টাকা ও স্ত্রীর নামে এফডিআর ৩ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ১০৯ টাকা ও সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৪৫ লাখ টাকা, কন্যার নামে সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা। শামীম ওসমানের দুটি গাড়ি রয়েছে। টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮ দাম ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৬৬ টাকা ও টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার ৮১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। স্বর্ণালংকার নিজ নামে ৩৮ তোলা ও স্ত্রীর নামে ৪০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে। বাসায় ইলেকট্রনিক্স পণ্যে মূল্য ৫ লাখ, স্ত্রীর নামে ১ লাখ ৫০ হাজার ও কন্যার ৫০ হাজার টাকার কম্পিউটার সামগ্রী। বাসায় আসবাবপত্র ৫ লাখ ও স্ত্রীর আসবাববপত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার সাথে থাকা লাইসেন্সকৃত পিস্তলের মূল্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা ও ২২ বোরের রাইফেলের দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন
শামীম ওসমানের সোনারগাঁয়ের বারদীতে ১২৩ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে যার মূল্য ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, মাসদাইরে ১০ শতাংশ জমি ও পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাঠার প্লট রয়েছে যার মূল্য ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। জামতলার বাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ৭৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে পিতার হেবা সূত্রে প্রাপ্ত ১৫ শতাংশ জমি রয়েছে। বিদেশে কর্মরত বন্ধু অনুপ কুমার সাহার কাছ থেকে সুদবিহীন ঋণ গ্রহণ করেছিলেন ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা। আইএফআইসি ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নিয়েছেন ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮৯ টাকা। গাড়ি বাবদ ঋণ নিয়েছেন ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ টাকা। ক্রস চেকের মাধ্যমে ঋন নিয়েছেন ১ কোটি টাকা। যৌথভাবে তিনি ফান্ডেড লোন নিয়েছেন আইএফআইসি ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে জেড এন শিপিং লাইন লিমিটেডের নামে ঋণ নিয়েছেন ১৫ কোটি টাকা ও মাইশা এন্টারপ্রাইজের নামে ঋণ নিয়েছেন ৫ কোটি টাকা।
নিজ দলের নেতাকর্মীরাও হয়েছেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত
শামীম ওসমানের হাতে নিজ দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হয়েছেন। যারা তার সাথে থাকেননি তাদেরকে নানাভাবেই লাঞ্ছিত বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেক সময় নিজ দলের নেতাকর্মীদের সুবিধা না দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। অন্য দল থেকে এনে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন।
২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ টক শো ‘একাত্তর সংযোগে’ সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে সাংসদ শামীম ওসমানের বাগবিতন্ডা হয়। সেখানে আইভীর ব্যক্তিজীবন এবং পরিবারকেও আক্রমণ করেন শামীম। অনুষ্ঠানের মাঝবিরতি এবং শেষে উত্তেজনা আরও বাড়ে। বিরতির সময়ের দৃশ্য সরাসরি দর্শকেরা দেখতে না পেলেও পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ঘটনার পরের দিন একটি অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান সম্পর্কে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র একটি ২০১৪ সালে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমি তথাকথিত নারী নই যে তার (শামীম ওসমান) কথা শুনে দল ছেড়ে চলে যাব বা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে যাব। আমি নাজমা রহমান নই যে তার কথা শুনে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাব। আমি এস এম আকরাম নই যে তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দল ছেড়ে চলে যাব। আমি গিয়াস উদ্দিন না যাকে বাধ্য করা হয়েছে অন্য দলে চলে যেতে। কামাল মৃধাকে মারা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে, দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। আমি আরাফাত নই। আমি আনোয়ার সাহেব নই যে আমাকে নানান ধরনের কথা বলা হবে, লোভ দেখানো হবে আর আমি অন্য দলে চলে যাব।’
পরিবহন মাফিয়া
নারায়ণগঞ্জের পরিবহন খাতে একছত্র আধিপত্য ছিলো শামীম ওসমানের। নারায়ণগঞ্জ থেকে যাতায়াতকারী সকল পরিবহননেই চাঁদা দিতে হতো শামীম ওসমানকে। পরিবহনক সুবিধা দেওয়ার জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচলকেও অনেক সময় বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জে পরিবহন নিয়ে অরাজকতা দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন সেক্টরের মতো এই পরিবহন খাতটি ছিল ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজির অন্যতম উৎস। যথেচ্ছভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করে জনগণকে দুর্ভোগ তৈরিতে স্থানীয় বিআরটিএ প্রশাসন সবসময় তাদের সহায়তা করতো।
বাবা-চাচাদের আস্কারায় খুনি আজমেরী ওসমান
বাবা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান ও চাচা শামীম ওসমানের আস্কারায় নারায়ণগঞ্জে রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন আজমেরী ওসমান। তিনি কাউকেই মানতেন না। যা চাইতেন তাই হতো। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা লিখলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হতো। সেই সাথে শুধু ত্বকী হত্যা নয় আরও বিভিন্ন খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন আজমেরী ওসমান।
সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় শামীম ওসমানের অন্যতম একজন খলিফা ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। এই মতির মাধ্যমে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও তেল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিশেষ করে আদমজী ইপিজেডের নিয়ন্ত্রক ছিলেন মতি। এই এলাকা থেকে যত টাকা আসতো তার থেকে ভাগ নিতেন তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি। এদিকে শহরের মাসদাইর এলাকার নিয়ন্ত্রক ছিলেন তার ছেলে অয়ন ওসমান।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০০ সালের ১৯ নভেম্বর নগরীর ইসদাইর ওসমানী স্টেডিয়ামের সামনে আজমেরী ওসমান কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে খুন করেন তারই এক সময়ের বন্ধু আলমগীরকে। এ ছাড়া ২০০৯ সালের এপ্রিলে শহরের আমলাপাড়ায় ১৪ টুকরা অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যায়। মামলা হলেও পুলিশ এই খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও আজমেরী ওসমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল গাজীপুরে শামীম ওসমানের শীর্ষ ক্যাডার নুরুল আমিন মাকসুদের লাশ পাওয়া যায়। তাকে আজমেরী ওসমান খুন করেছেন বলে নারায়ণগঞ্জে প্রচার রয়েছে। ২০১১ সালে শহরের প্রেসিডেন্ট রোডে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে গলা কেটে খুন করা হয় অটোচালক জামালকে। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পরিবহনে রাজি না হওয়ায় আজমেরীর বাহিনী তাকে খুন করে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হলেও তাকে মামলায় আসামি করা যায়নি।
বিএনপির বিক্ষোভ-ফাইল ছবি
একই বছরের ১১ মে শীতলক্ষ্যা নদীতে ব্যবসায়ী আশিক ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। তার মুখমন্ডল ঝলসানো এবং বিশেষ অঙ্গ ছিল থেঁতলানো। এই হত্যাকান্ডেও আজমেরী ওসমান জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আশিক হত্যার পর ২০১১ সালের মে মাসের শেষ দিকে শীতলক্ষ্যা নদীতে অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবকের লাশ পাওয়া যায়। সে সময় নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রচার হয়, এই দুটি লাশ আশিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত ভাড়াটে খুনির। হত্যার আলামত মুছে ফেলতে তাদের খুন করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর শীতলক্ষ্যা নদীতে টানবাজারের রং-সুতা ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহা ভুলুর লাশ পাওয়া যায়। চাঁদা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে তার ভাই চিত্তরঞ্জন সাহা সে সময় জানিয়েছিলেন।
২০১২ সালের ১৫ জুলাই গাবতলী এলাকার বাসিন্দা মিঠুকে শহরের জামতলা ধোপাপট্টি এলাকায় হিরা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে প্রকাশ্যে খুন করা হয়। তিনি গাবতলী এলাকায় আজমেরীর অনুগত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। মিঠুর বাবা খোরশেদ আলম তখন জানিয়েছিলেন, ফতুল্লা থানার ওসি তাকে দেখান আজমেরীর নাম দিলে মামলাই নেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন
মিঠুকে হত্যার পরদিনই সাংস্কৃতিক কর্মী দিদারুল আলম চঞ্চলকে খুন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ না করে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে কাজ করায় তাকে হত্যা করা হয়। চঞ্চলের ভাই জুবায়ের ইসলাম পমেল জানান, চঞ্চলের লাশ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বন্দর থানার ওসি অজ্ঞাত হিসেবে লাশ দাফন করে বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ চাষাঢ়ায় সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণ করা হয়। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী পোতাশ্রয় থেকে তার লাশ পাওয়া যায়। এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া আজমেরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতে সে জানায়, শহরের কলেজ রোডের টর্চার সেলে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বেই ত্বকীকে খুন করা হয়।
২০১৩ সালের নভেম্বরে ১ নম্বর বাবুরাইল থেকে নিখোঁজ হন নাট্যকার মামুনুর রশীদের আত্মীয় আসিফ। আজমেরী বাহিনী তাকে গুম করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের পরিবহন খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল শামীম ওসমানের। নারায়ণগঞ্জ থেকে যাতায়াতকারী সকল পরিবহননেই চাঁদা দিতে হতো শামীম ওসমানকে। পরিবহনক সুবিধা দেওয়ার জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচলকেও অনেক সময় বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ত্বকী হত্যার ঘটনায় র্যাব তার বিরুদ্ধে খসড়া চার্জশিটও দিয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা থাকায় কখনও গ্রেফতার হননি আজমেরী ওসমান। এমনকি হত্যা মামলায় তার নাম দিতে চাইলে সেই মামলাও নেওয়া হতো না। গত ৫ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আজমেরী ওসমান বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন শামীম ওসমান
শামীম ওসমান সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেন, বিগত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জে একটা মাফিয়া তৈরি হয়েছিল। শামীম ওসমান এটা কন্ট্রোল করতো।
শামীম ওসমান প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, স্বৈরশাসকের চারণভূমি ছিল নারায়ণগঞ্জ। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার সমর্থনেই শামীম ওসমান গডফাডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার বিশাল বাহিনী ছিল যারা অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত থাকতো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়েও তার অস্ত্রের শোডাউন নারায়ণগঞ্জাবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। তার কাছে নিজ দলের লোকজনও জিম্মি ছিল। আর এ বিষয়টি শেখ হাসিনাও জানতো কিন্তু শামীম ওসমানকে ব্যবহারের জন্য কেউ কিছু বলতো না। আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে শামীম ওসমান। সবমিলিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল নারায়ণগঞ্জে।
তিনি আরও বলেন, শামীম ওসমান এলাকায় কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারেনি। আমরা শুধু শুনেছি তিনি এই কাজ নিয়ে এসেছেন সেই কাজ নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আমরা কোনো উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করছি না। যদি তিনি উন্নয়ন কাজ করতেন তাহলে বর্তমানে কোনো সমস্যা থাকতো না। আমাদের ধারণা যে বরাদ্দ এনেছেন সেগুলোর টাকা কাজ না করেই আত্মসাত করেছেন।
এমওএসআর/এসএইচএস/এমএস