সমুদ্রস্নানের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাসলীলা
সমুদ্রস্নান বা পূন্যস্নানের মধ্য দিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় শেষ হয়েছে রাস উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ৬টায় জাগতিক সকল পাপ মোচনের আশায় সৈকতের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে এ গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
স্নানের আগে মোমবাতি, আগরবাতি, বেলপাতা, ফুল, ধান, দুর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর কৈতের জলে অর্পন করেন সনাতনী নারীরা। এ সময় উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত। এছাড়া মাথা ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিণ্ডদান করেন অনেক মানতকারীরা।
এর আগে রাতভর কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পূজার্চনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও মহানাম কীর্তনে মেতে ওঠে সনাতনীরা।
পটুয়াখালী থেকে আগত বিপুল চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিশ্বাস, এই দিনে সকল পাপ মোচনের মুহূর্ত। তাই আমরা গতকাল কুয়াকাটায় এসেছি। রাতভর ভগবানের গুনকীর্তন শেষ করে সকালে সমুদ্রস্নানের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে শান্তি চেয়েছি।
বুধবার সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়ে শনিবার সকালে সমুদ্রস্নানের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। রাস পূজায় অংশ নিতে পূণ্যার্থীদের ভিড়ের পাশাপাশি পর্যটকদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ছিলো কঠোর নজরদারি।
রাস পূজা আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক ও কুয়াকাটা সৈকতে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সভাপতি কাজল বরণ দাস বলেন, সৈকতের পাড়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসবেন তারা।
কুয়াকাটা সৈকতে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন মন্ডল জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দেশে সবাই মিলে একটি সুন্দর লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলেছে, যা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমাদের এই মন্দিরের পাশেই একটি মসজিদও রয়েছে, আমাদের মধ্যে বেশ সু-সম্পর্ক।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, রাস উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন আয়োজন হাতে নিয়েছি। বরাবরের থেকে একটু আলাদা বিনোদন দিতেই আমরা তিনদিনের কনসার্ট, মার্কেটের প্রসার বাড়ানো, আলাদাভাবে মোবাইল টয়লেট, চেইঞ্জিং রুমসহ নানা আয়োজন করেছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিরাপত্তায় কঠোর ছিলাম আমরা। আমাদের প্রায় ৪৪৩ জন সদস্য নিয়োজিত ছিল। আজ সকালে রাসমেলার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপত্তা বহাল রাখবো।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এফএ/এএসএম