ভোলা
ঢালচরে তীব্র ভাঙন, সহস্রাধিক পরিবার নিঃস্ব
ভোলার চরফ্যাশনের দ্বীপ ঢালচরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিনের পর দিন মেঘনায় বিলীন হচ্ছে বসতঘর, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে রাস্তার পাশের সরকারি জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, শত বছর আগে মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠে বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়ন। আগে এটি চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের সঙ্গে থাকলে ২০১০ সালে পৃথক ইউনিয়ন করা হয়। শুরু থেকে ওই ইউনিয়নে ১৭ হাজার মানুষের বসবাস থাকলেও বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। এখানকার মানুষের আয়ের একমাত্র আয়ের উৎস মৎস্য ও কৃষি কাজ।
ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো, আবু তাহের বলেন, ২৫-৩০ বছর ধরে ঢালচরে বসবাস করছি। বসতঘর একবার ভাঙে আর কিছু দূরে গিয়ে আবার করি। সেখানে আবার ভাঙনের শিকার হয়। এভাবে কারো ১০ বার, কারো সাতবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে কয়েক দফায় বসতঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
ওই এলাকার নার্গিস বেগম জানান, তার স্বামী নদীতে মাছ শিকার করে কোনোমতে সংসার চালান। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে শান্তিতে নেই। এখন পর্যন্ত ৭-৮ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। তিন বছর আগে আনন্দবাজার সংলগ্ন এলাকায় ঘর তুলে বসবাস করছি। কিন্তু এখন নদী আবার ঘরের সামনে চলে আসছে।
মো. সোলেমান মোল্লা বলেন, আগে আমাদের ফসলি জমি ছিল। সে জমিতে তারা ধান-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে সংসার চালাতাম। ৩-৪ বছর আগে ফসলি জমি ও বসতঘর ভাঙনের সব বিলীন হয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে ছেলেদের নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, নদীভাঙনের কারণে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেক পরিবার ঢালচর থেকে চলেও গেছে। এখনও প্রায় ১০-১২ হাজার মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, ভাঙন রোধে কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলোর কাজ শেষ হলে আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ঢালচরকে মেঘনা নদীর ভাঙন রোধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, ভাঙন রোধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি। ভাঙন কবলিতদের পুনর্বাসনের জন্য সব ধরণের সহযোগীতার আশ্বাস দেন তিনি।
জুয়েল সাহা বিকাশ/আরএইচ/জিকেএস