আমুর সেই জমজমাট বাড়িটি এখন ভূতুড়ে
ঝালকাঠি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোনালছে রোডে অবস্থান ভিআইপি বাড়িটির। ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। ভেতরেও ছিল রাতে পাহারার ব্যবস্থা। বাড়িটির মালিক আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু। তিনি যখন এলাকায় আসতেন মানুষে সরগরম থাকতো ভবনটি। ভবনের সামনে থাকতো অনুসারী নেতাকর্মীদের গাড়ির সারি। দীর্ঘ জ্যাম লেগে থাকতো বাড়ির সামনের সড়কটিতে।
কিন্তু সেই বাড়িটিতে এখন সুনসান নীরবতা। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ক্ষতবিক্ষত ভবনটি দেখলে মনে হচ্ছে পোড়া কোনো ভূতুড়ে বাড়ি। সুদৃশ্য বাড়ির ভবন দুটির ভেতরের পুরো অংশ পুড়ে কালো হয়ে গেছে। ভবনটির দরজা-জানালাও নেই।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শোচনীয় ক্ষমতাচ্যুতির পর দুপুরে তৎকালীন ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি সদর-নলছিটি) আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। একই দিন আমুর অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঝালকাঠি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমানের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে ক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় ভবনে থাকা সব মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগ করে ওই চক্রটি। তবে ৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত ঝালকাঠি শাসন করা আওয়ামী লীগ নেতা আমুর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ।
সরেজমিনে ঝালকাঠি উপজেলা সদরের ওইসব বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। ভবনগুলো কালো হয়ে আছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে শহরের প্রাণকেন্দ্র ফায়ার সার্ভিসের মোড় থেকে রোনালছে রোড সংলগ্ন সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর বাসভবন থেকে শুরু করে রিড রোডে (পুরাতন টাউন হল) থাকা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এরপরই তারা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে দু’দফা হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এমনকি তারা শহরের আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন গোডাউন এবং অফিসে হামলা ও লুটপাট করে।
লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর বাসভবন থেকে বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ৫ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি শহরের রোনালছে রোডে আমুর বাসা থেকে এই অর্থ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দুপুরে বিক্ষুব্ধ লোক আমুর বাসভবনে ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময়ে যা পেরেছে হাতিয়ে নিয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক দফা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাত ১২টার দিকে স্থানীয়রা ওই ভবনের তিনতলায় আবারও আগুন জ্বলতে দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভানোর সময় কয়েকটি পোড়া লাগেজ থেকে টাকার বান্ডিল পান।
তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা টাকার লাগেজগুলো উদ্ধার করেন। তারা একটি লাগেজে অক্ষত এক কোটি টাকা এবং অপর লাগেজগুলো থেকে গণনা করে আংশিক পোড়া দুই কোটি ৭৭ লাখ টাকা উদ্ধার করেন। এছাড়া বিদেশি ডলার ও ইউরোসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যমানের মুদ্রা পান।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনমাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ভবনটির তৃতীয় তলার কক্ষে অনেকগুলো কম্বলে লাগা আগুন নেভানোর সময় কিছু টাকার বান্ডিল বেরিয়ে আসে। এর সঙ্গে কয়েকটি লাগেজও পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। টাকাগুলো প্রশাসন জব্দ করে এবং সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
এফএ/এমএস