ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

দু’মাসের মধ্যে চালু হলেও পূর্ণগতিতে চলবে না ট্রেন

আরিফ উর রহমান টগর | টাঙ্গাইল | প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর উদ্বোধন করা হবে। যদিও এতদিন বলা হচ্ছিল, ডিসেম্বরেই যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালু করা সম্ভব হবে। কিন্তু কিছু জটিলতা থাকায় সেতু উদ্বোধনের সময় সামান্য হেরফের করে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা জানিয়েছে প্রকল্প সূত্র।

এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, যমুনা সেতু পূর্ব ও পশ্চিম রেলস্টেশনে শুরু থেকে কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রথম দিকে সেতুতে পূর্ণগতি অর্থাৎ ১২০ কিলোমিটার বেগ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসি এবং ভারত থেকে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে জটিলতার কারণে সেতুর দুই পাশের স্টেশনে শুরু থেকে সিবিআইএস চালু করা যাচ্ছে না। ফলে এ সময়টাতে ট্রেনের গতি অনেক কম থাকবে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে সিবিআইএস চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

দু’মাসের মধ্যে চালু হলেও পূর্ণগতিতে চলবে না ট্রেন

রেল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে সমান্তরালভাবে নির্মাণাধীন প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুর জন্য সাড়ে ৭ কিলোমিটারের বেশি রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী গত আগস্টের মধ্যে এসবের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকল্পের সময়সীমা সংশোধন করে তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।

রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতুতে যে মিটারগেজ রেললাইন রয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭০ কিলো-নিউটন/মিটার ওজন বহন করা সম্ভব। তাই ট্রেনে বেশি বগি যুক্ত করার সুযোগ নেই। এছাড়া এক লাইনের সীমাবদ্ধতা থাকায় বেশি ট্রেন চালানোও সম্ভব নয়। মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পাড় হতে ২৫ মিনিট লেগে যায়। দুই পাড়ের স্টেশনে সিগন্যালের জন্য ট্রেনগুলোকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। যমুনা রেলসেতু উদ্বোধন হলে এ রুটে গড়ে সময় বাঁচবে এক ঘণ্টা। ক্রসিংয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে পাঁচটি জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের আওতায় সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। সিবিআইএস চালু করার কাজে জাপানি বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিটাচির সহায়তা নিচ্ছে রেলওয়ে। ভারতে হিটাচির পণ্য উৎপাদন কারখানা থাকায় জাপানি ঠিকাদাররা সেখান থেকেই পণ্য আমদানি করছিলেন। তবে সম্প্রতি সেখান থেকে পণ্য আমদানি করতে কিছু জটিলতায় পড়েছেন ঠিকাদাররা। প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর ওই জটিলতা নিরসনে রেলওয়ে ঠিকাদারদের তাগিদ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রেল সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, নতুন এই রেলসেতু দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও সিবিআইএসের কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪০-৪২ শতাংশ। এ পদ্ধতি চালু করতে আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেতু উদ্বোধন হওয়ার পরে আরও দু-তিন মাস লাগতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া সিগন্যাল সিস্টেম সাধারণত স্টেশনে থাকে, সেতুতে থাকে না। তাই গতি পেতে তেমন কোনো সমস্যা হবেনা। আগামী মার্চ মাসের শেষ দিকে কম্পিউটার ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হবে। আপাতত প্রথাগত নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থায় ট্রেন চালাতে হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা চালু না হলে ট্রেনের গতি কমে সময়ের অপচয় হওয়া ছাড়াও নিরাপত্তার দিকে ঘাটতি থাকবে। এ থেকে জটের আশঙ্কাও রয়েছে।

সূত্রমতে, পুরোনো নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থা যতদিন চালু থাকবে, ততোদিন নয়া সেতুতে ট্রেনের গড় গতিসীমা অনেক কম থাকবে। এ ব্যবস্থায় ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে গেলে মারাত্মক শিডিউল বিপর্যয় ঘটবে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু না হলে পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথে নিরাপত্তাগত শঙ্কা থেকে যাবে।

দু’মাসের মধ্যে চালু হলেও পূর্ণগতিতে চলবে না ট্রেন

তিনি জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরুতে সিগন্যাল সিস্টেমের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। যে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ট্রেনের গতি বাড়িয়ে শিডিউল বিপর্যয় কমানো। সেখানে নন-ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম চালু থাকলে যাত্রীসেবার মান বিন্দুমাত্র বাড়বে না। এতে রেলপথে যাত্রী ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রমতে, নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য ৫০টি পিয়ার ও ৪৯টি স্প্যানের নির্মাণকাজ চলছে। সব পিয়ার ও স্প্যানের উপরিকাঠামোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর দুই দিকে বাঁধ নির্মাণের কাজও শেষ। সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন ১ থেকে ২৩ নম্বর পিয়ারের মাঝের অংশে লাইনের খুঁটিনাটি কিছু কারিগরি কাজ চলছে। সেতু পূর্ব স্টেশনে স্টেশন ভবন, প্ল্যাটফর্ম, প্ল্যাটফর্ম শেড, পার্কিং এরিয়া, অন্যান্য নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর পশ্চিম প্রান্তে এসব কাজের ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। উভয় প্রান্তে সিগন্যালিং ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার কাজের অগ্রগতি ৪৫-৪৭ শতাংশ। যমুনা বহুমুখী সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেলসেতু চালুর পরে আন্তঃনগর, লোকাল, কমিউটার, মালবাহী ট্রেনসহ ৮৮টি রেল চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, সিবিআইএস চালুর বিষয়টি প্রকল্প পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। দেরি হলেও ১৫ দিন থেকে ১ মাসের বেশি সময় লাগবে না।

রেলসেতুর উদ্বোধনের পর এ রুটে নতুন ট্রেন যুক্ত করা হবে কি না জানতে চাইলে মহাপরিচালক আরও বলেন, ঢাকার সঙ্গে ওই অঞ্চলে নতুন ট্রেন যুক্ত করা কঠিন হয়ে যাবে। থার্ড বা ফোর্থ লাইন চালু না হলে নতুন ট্রেনের ক্যাপাসিটি তৈরি হবে না। নতুন ট্রেন এলেও জয়দেবপুর বা টঙ্গী পর্যন্ত চালানো যেতে পারে। এতে পুরোপুরি সুফল আসবে না।

এফএ/জিকেএস