বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি সামরিক কমান্ডার : স্ত্রী গ্রেফতার
বগুড়ার শেরপুরে জঙ্গি আস্তানায় বোমা বানাতে গিয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত দুজনের একজন ছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির চট্রগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সামরিক কমান্ডার। তার মোট ৫টি নাম। মূল নাম রাইসুল ইসলাম খানের (২৬) সঙ্গে নোমান ওরফে ফারদিন ওরফে সজল ওরফে রাসেল নামে পরিচিত ছিল তিনি সংগঠনে।
রোববার দুুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
রাইসুল ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার জোরবাড়িয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হবার এক মাস পর তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর পুলিশ তার পরিচয় উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে। সেই সঙ্গে তথ্য মিলেছে তার নাশকতাসহ নানা কর্মকাণ্ডের।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, গত ৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেরপুরের গাড়ীদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর কুঠিবাড়ী গ্রামের একটি বাড়িতে গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয়। নিহত একজনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ এবং তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেলেও অপরজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
পরে তার মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়। এরপর দীর্ঘ অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে শনিবার রাতে শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে আব্দুল বাকীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার মেয়ে মাছুমা আক্তারকে (২৩) গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃত মাছুমাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নিহত জঙ্গির ছবি দেখালে সে ওই নিহত জঙ্গিকে নিজের স্বামী বলে শনাক্ত করে।
মাছুমা পুলিশকে জানায়, নিহত রাইসুল জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ন্যাংটা ফকির হত্যা ও ধর্ণাঢ্য হিন্দু ব্যবসায়ীকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে টাকা ছিনতাইয়ের মূল হোতা ছিল। এছাড়াও আরো নানা অপকর্ম এবং পরিকল্পনার তথ্য সে জানায় পুলিশকে।
গোয়ন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাছুমাকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে তারা জানতে পারে নিহত জঙ্গি ফারদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি জেএমবিতে সম্পৃক্ত হন।
জেএমবির সূত্র ধরেই বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের আব্দুল বাকীর ছেলে মোস্তাফিজার রহমান ওরফে মোস্তাক ওরফে শাকিল ওরফে বোমা শাকিলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১২ সালে শাকিলের ছোট বোন মাছুমাকে বিয়ে করে ফারদিন।
পুলিশ সুপার বলেন, ফারদিনের স্ত্রী মাছুমার বড় ভাই মুজাহিদ জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তিনি জেএমবির শীর্ষ নেতা বাংলা ভাইয়ের সহযোগী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জঙ্গি মামুনের আপন ভগ্নিপতি। মুজাহিদ বর্তমানে পলাতক রয়েছে। নিহত ফারদিনের স্ত্রী মাছুমা এবং ফারদিনের শশুড় বাড়ির সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত।
জিজ্ঞাসাবাদে মাসুমা পুলিশকে আরো জানায়, তথ্য গোপন রাখতে জেএমবির সদস্যরা নিজেদের মধ্যেই বিয়ে-শাদি করে থাকে। এভাবে আত্মীয়তার সূত্র ধরেই তারা নিজেদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল রাতে শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর কুঠিবাড়ী গ্রামের একটি বাড়িতে গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত একজন ও একজন গুরুতর আহত হয়। আহত ব্যক্তিও পরে হাসপাতালে মারা যায়। ঘটনাস্থলে নিহত জঙ্গির নাম জুয়েল বলে পরে নিশ্চিত হওয়া গেলেও পরিচয় না পাওয়া অপর জঙ্গির মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়।
এআরএ/পিআর