ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ছাত্র আন্দোলন

অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি রায়হানের

জেলা প্রতিনিধি | পটুয়াখালী | প্রকাশিত: ০৮:৫৯ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

‘সেদিন (৫ আগস্ট) সকালেও আমার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হইছে। তখন বলছে (বলেছে), আব্বা ১০ আগস্ট বেতন পামু, আওয়ার কালে মা’র লইগ্যা ঔষধ লইয়া আমু। মোবাইলে কতা কইয়া আমি বাজারে গেছি। কতকুন (কিছুক্ষণ) পর শুনি আমার ছেলে গুলি খাইছে। ওইদিনই রাইতে ঔষধ ছাড়াই আমার ছেলে বাড়ি ফিরলো, তবে লাশ হইয়া।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ রায়হান আকনের (১৯) বাবা কামাল আকন এভাবেই ছেলেকে হারানোর স্মৃতি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানার কাছে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রায়হান। তিনি পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি রায়হানের

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসচ্ছল পরিবারের হাল ধরতে গত এপ্রিলে পড়াশোনা ছেড়ে ঢাকায় যান রায়হান আকন। ঢাকার বাড্ডা এলাকায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে সাড়ে ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছিলেন। তার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তার পুরো পরিবার। অসুস্থ মায়ের ওষুধ, ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ, বাবার পকেট খরচ—সব কিছুই চলতো রায়হানের টাকায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দিনগুলোতে নিয়মিত অংশ নিতেন রায়হান। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে বিজয় মিছিল বের হন। ওই মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে সড়কের পাশে পড়ে ছিলেন রায়হান।

পরে ছাত্র-জনতা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতেই স্বজনদের সহযোগিতায় রায়হানের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি রায়হানের

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা রেহেনা বেগম (৪০)। তিনি অসুস্থ। ছেলের স্মৃতি মনে করে শুধু কাঁদেন। রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার বাবার ইচ্ছা ছিল আমাদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকবে। অনেক কষ্ট কইরা আমি আমার বাবারে বড় করছি। সবেমাত্র সুদিন আসতে শুরু করছিল। কিন্তু শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ হইয়া গেছে। চাকরি করতে গেছে আমাগো ভরণপোষণ সব দেবে, কিন্তু আমার বাবাই লাশ হইয়া ফেরছে।’

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জাগো নিউজকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়ভাবে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কবরগুলো বাঁধাই করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আহত ও শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে।

আব্দুস সালাম আরিফ/এসআর/এমএস