টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ভোলার তিন যুবকের
ঢাকা ও চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভোলার তিন যুবক। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় কেউ চাকরি হারিয়েছেন। আবার কেউ কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা ধারদেনা করে কিছুটা চিকিৎসা করালেও টাকার অভাবে হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন বলে আশা পরিবারের।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর মানিকা ইউনিয়নের দক্ষিণ আইচা এলাকার হাওলাদার বাড়ির কেরামত আলীর ছেলে আহত আবুল খায়ের। তিনি চট্টগ্রামের খুলশীতে একটি সুপার সপের এরিয়া সুপার ভাইজারের চাকরি করতেন। গত ৫ আগস্ট বিকেলে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ চলছিল। ওই সময় তিনি চট্টগ্রামের গোলপাহাড় মোড় থেকে কাজ শেষে খুলশীতে যাওয়ার সময় ওয়াসা মোড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। তার পেটে দুইটি, কাঁধে একটি ও বাম পায়ের রানে একটিসহ ৪টি গুলি লাগে। এ সময় ছাত্ররা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রামের হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারে খবর দেন।
তিনি জানান, তার অবস্থা গুরুতর হলে গ্রামের বাড়ি থেকে ধার-দেনা করে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসনে। এ পর্যন্ত তার ৪টি অপারেশন হয়েছে। এতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখনো ২টি অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে অপারেশন ও ওষুধের খরচ নিয়ে দুশ্চিতায় তিনি।
আবুল খায়েরের মা হালিমা বেগম ও বাবা কেরামত আলী জানান, তাদের ছেলে কোনো রাজনীতি করেন না। কোনো আন্দোলনেও যাননি। অফিসের কাজ শেষে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। আবুল খায়ের ও তার ছোট ভাইয়ের চাকরির আয়ে চলে বৃদ্ধ বাবা-মা, ছোট ভাই-বোনদের পড়াশুনা এবং সংসার। বর্তমানে আয় রোজগার না থাকায় কষ্টে চলছে সংসার ও ছেলের ওষুধের খরচ।
তারা বলেন, আগে অনেক টাকা ধার-দেনা করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে হবে, এজন্য আমরা সরকারিভাবে সহযোগিতা কামনা করছি।
এদিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নানগর ইউনিয়নের জিন্নানগর গ্রামের মো. নুর হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। গত ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভ্যান চালিয়ে ফেরার পথে বোমা সদৃশ একটি বস্তু এসে তার শরীরে লাগে। এতে তার বাম হাত ও দুই পা ঝলসে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে পরিবারের সদস্যদের খবর দেন। খবর পেয়ে গ্রাম থেকে ছুটে যান তার পরিবারের সদস্যরা। অপারেশন করে বাম হাতের কব্জি কেটে ফেলা হয়। তবে সুস্থ হননি তিনি।
তিনি জানান, বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন তিনি। ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারছেন না। তার পরিবারের সদস্যরা গ্রামের বিভিন্ন লোকজন থেকে ধার-দেনা করে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করেছেন চিকিৎসায়। বর্তমানে ওষুধ খরচও জোগাতে পারছেন না তিনি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। টাকার অভাবে দুই সন্তানের পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসা করে আবারো কাজ করে জীবিকা অর্জন করতে তিনি সরকারি সহযোগিতা দাবি করেন।
এছাড়া ভালো নেই ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের আহত মো. খোকন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একটি কারখানায় পঞ্জাবি সেলাইয়ের কাজ করতেন তিনি। ৪ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হন। তার দুই পায়ের বিভিন্ন অংশে ৭৫টি গুলি লাগে। রিকশাচালক বাবা ও বড় ভাই ধার-দেনা করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে অপারেশন করিয়ে ৪৩টি গুলি বের করলেও এখনও ৩২টি গুলি রয়েছে তার দুই পায়ে। টাকার অভাবে হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা। আর দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হওয়ায় হারিয়েছেন চাকরিও। আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান তিনি। এজন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা কামনা করেন।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, তারা আহতদের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছেন। সরকারিভাবে নির্দেশনা পেলে যাচাই-বাছাই করে আহতদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
এফএ/এমএস