গ্রিন সিটিতে চোখ রাঙাচ্ছে শব্দ দূষণ
রাজশাহীতে ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে শব্দ দূষণ। নগরীর বাণিজ্যিক, আবাসিকসহ প্রায় সব এলাকায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শব্দের মাত্রা। ফলে অতিরিক্ত শব্দে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে নগরীর বাসিন্দাদের।
শনিবার (১২ অক্টোবর) বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে প্রতিবেদনে দেখা যায়, নগরীর তালাইমারী এলাকায় ৮৮ দশমিক ৮ ডেসিবেল, রেলগেটে ৯৬ দশমিক ৩ ডেসিবেল, বিসিক মোড়ে ৭৬ ডেসিবেল, লক্ষ্মীপুর মোড়ে ৯৬ দশমিক ১ ডেসিবেল ও সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ৯০ দশমিক ৫ ডেসিবেল শব্দ পাওয়া যায়।
সংস্থার প্রকৌশলী ড. জাকির হোসেন খান বলেন, অধিকাংশ যানবাহন অযথা হর্ন বাজায়। বর্তমানে রাজশাহীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং রিকশা বিদ্যমান। যেগুলো মূলত টিটি হর্ন ব্যবহার করে। নগরীর তালাইমারী ও রেলগেটে বাসগুলোকে অযথা হর্ন বাজাতে দেখা যায়। অটোরিকশায় ভেঁপু হর্ন বাধ্যতামূলক করা উচিত, যেন অন্য কোনো হর্ন ব্যবহার করতে না পারে। এছাড়া অটোরিকশা আর রিকশা নির্দিষ্ট লেনে দাঁড়ালে অহেতুক হর্ন দেওয়া কমে যাবে।
শব্দ দূষণ প্রতিকারে তিনি বলেন, শহরের মধ্যে গতি সীমা নির্দিষ্ট করলে এর পরোক্ষ প্রভাব শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের ওপর পড়বে। শব্দ দূষণের প্রভাব শুধু মানুষের ওপর না, প্রতিটি পশু-পাখির ওপরও পড়ে। গাছ শব্দের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর। আমের শহর রাজশাহীতে আম-জাম জাতীয় ফলের গাছ, নিম, সজনে জাতীয় উপকারী গাছ লাগানো যেতে পারে। যেগুলো বড় হলে শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। সজনে গাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন নির্গমনে কার্যকর গাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই এসব গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা গেলে অনেকটা কার্যকরী হতে পারে।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এএসএম ইকবাল হোসাইন সাঈদ বলেন, উচ্চ মাত্রার শব্দ দূষণ কানের শ্রবণ ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় এ অবস্থায় থাকলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। এটা থেকে বাঁচতে হলে রাস্তায় গাড়ির হাইড্রোলিক হর্নগুলো কমাতে হবে। এটা নগর কর্তৃপক্ষকে সমাধান করতে হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, শব্দের মাত্রা আসলেই বেড়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে শহরে লাল-সবুজ অটোগুলো শৃঙ্খলা ভেঙে একত্রে চলছে। পাশাপাশি মহানগরীর বাইরের অটোরিকশাও শহরে ঢুকেছিল। মূলত যানবাহন বেড়ে যাওয়ার কারণে শব্দের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, অন্যকে দোষারোপের অভ্যাসটা বাদ দিতে হবে। আমি একজনকে দোষারোপ করলাম, অন্যজন আরেকজনকে দোষারোপ করলাম এটা দুঃখজনক। তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করুক। ৫ তারিখের পর পুলিশ সাধ্যমত চেষ্টা করছে। ২০-২৫ দিন আগে থেকে দুই শিফটের অটো একত্রে চলা বন্ধ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র শুক্রবার দুই অটোরিকশা একসঙ্গে চলে।
সাখাওয়াত হোসেন/আরএইচ/জিকেএস