ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

হবিগঞ্জে জাইকা প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন | হবিগঞ্জ | প্রকাশিত: ১১:৪১ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২৪

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে জাইকা বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ ও খাল পুনঃখনন প্রকল্পের নামে ব্যাপক লুটতরাজ করা হয়েছে। কাজ না করেই ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে প্রকল্পের টাকা। যে দু’য়েক কোদাল মাটি দেওয়া হয়েছিল সেটাও ভেসে গেছে নদীতে।

এদিকে প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমাণ এবং বিল ছাড় নিয়েও লুকোচুরি করছে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী অফিস। এ নিয়ে ক্ষোভ আর অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয়দের মধ্যে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে ‘পশ্চিমভাগ বেড়িবাঁধ পাবসস উপ-প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে এলজিইডি। যার অর্থায়ন করে জাইকা। ২০২২ সালে ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১.৭৫ মিটার প্রস্থের বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং গয়েল খাল ও বোয়ালিয়া খাল খনন বাবদ মোট ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৭৬ টাকা। প্রকল্পকে ২৬টি ভাগে ভাগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি পায় পশ্চিমভাগ বেড়িবাঁধ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। উক্ত সমিতির সভাপতি মো. সামছু মিয়া তালুকদার এবং সম্পাদক তাবাজুল হোসেন তালুকদার।

কার্যাদেশ পাওয়ার পর সমিতির পক্ষ থেকে স্থানে স্থানে দু’য়েক কোদাল মাটি ফেলা হয়। কোথাও আবার কোদাল দিয়ে মাটি টেনে সমান করে দেওয়া হয়। এর বেশি তেমন কাজ করতে হয়নি। কারণ ২০১৭ সালে বিএডিসির অর্থায়নে বোয়ালিয়া খাল খনন করে। খাল থেকে উত্তোলিত মাটি দিয়ে খালের তীরে ৩ হাজার মিটার বাঁধ নির্মাণ করে। বাকি ১ হাজার ৮৭০ মিটার বেড়িবাঁধ ঝিংড়ি নদীর পাড়ে। এটি ২০২১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করেছে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে হিলিপ ঝিংড়ি মুখ-কচুরিয়া খাল পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় প্রথম দফার ৩ হাজার মিটার বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ করে। অথচ একই বছর জাইকার অর্থায়নে একই স্থানে আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। তবে বাঁধটি আগেই থাকায় সেখানে তেমন কোনো কাজ করতে হয়নি।

তবে যে সামান্য কিছু মাটি ফেলা হয়েছে তাও আবার বানের পানিতে ভেসে গেছে। নতুন মাটি ফেলার চিহ্ন তেমন একটা নেই। নদীর তীরে অন্তত দেড় থেকে দুইশ মিটার স্থানে মাটি ফেলে বাঁধ নির্মাণের কথা বলা হলেও বাস্তবে গিয়ে এর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। দেখা গেছে এখানে একটি বাড়ি রয়েছে। যার পাশে নদীর তীরে কোনো বাঁধ নেই। এটুকু কাজ দেখিয়েই বিল উত্তোলন করা হয়েছে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৫ টাকা। তবে বিল ছাড় নিয়েও করা হয়েছে লুকোচুরি।

হবিগঞ্জে জাইকা প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ

প্রকল্পের সমিতির সভাপতি মো. সামছু মিয়া তালুকদার বলছেন, তারা বিল পেয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। সে জন্য অফিসকে তাদের দিতে হয়েছে ১২ শতাংশ হারে টাকা। যা অফিসের নিয়ম বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তবে এলজিইডির প্রকৌশলী বলছেন, এতো টাকা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সর্বোচ্চ বিল দিয়েছি ২২ লাখ টাকা। তারা ৩০ লাখ পাবে কোথায়?

প্রকল্পের ব্যয় ধরা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। পুরো প্রকল্পের কাজ নিয়েই দু’পক্ষ লুকোচুরি করছে। তাদের মধ্যে কথায়ও ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গেছে।

প্রকল্পের সভাপতি (পশ্চিমভাগ বেড়িবাঁধ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি) মো. সামছু মিয়া তালুকদার জানান, তারা প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছেন। কিছু স্থানে মাটি লেভেল এবং আংশিক কাজ করার বাকি ছিল। মোট ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার মধ্যে বাঁধের জন্য বরাদ্দ ছিল ৯০ লাখ এবং দু’টি খাল খনন বাবদ বরাদ্দ ছিল বাকি টাকা। খাল খননের কোনো কাজ তারা করেননি। কাজের জন্য তারা মোট ৩০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছেন। এ জন্য তাদের নিয়ম অনুযায়ীই অফিসে ১২ শতাংশ হারে টাকা দিতে হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিলের টাকার ভাগ সবাই নিয়েছে। এখন একটি পক্ষ কাজ হয়নি বলে অভিযোগ দিয়েছে। অথচ তারাও টাকার ভাগ নিয়েছে।

বাঁধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঁধের কাজটি করার পরপরই বন্যা চলে আসে। বন্যায় বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেসে গেছে।

আজমিরীগঞ্জ (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আহমেদ তানজীর উল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, প্রকল্পটিতে চার ভাগের এক ভাগ কাজ হয়েছে মাত্র। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরোধের কারণে কাজটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা বারবার চেষ্টা করেও তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারিনি। তাই কাজটিও আর হয়নি। এখন আর এ কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমরা বিল দিয়েছি ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২২ লাখ টাকা। ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। আর অফিসে কেউ কোনো টাকা দেয়নি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে পূর্বে কোনো বাঁধ ছিল না বলেও তিনি দাবি করেন।

সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিয়া বলেন, এ প্রকল্পে কোনো কাজই হয়নি। এক টুকরো মাটিও ফেলা হয়নি। পূর্বের কাজকেই তারা মাটি ফেলা হয়েছে দেখিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে হাত করে টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে।

এদিকে প্রকল্পের টাকা লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে সমিতির বর্তমান সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ ১০ জন সদস্য জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তারা উল্লেখ করেন, ১ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৭৬ টাকা প্রকল্পটির কাজ না করেই ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৫ টাকা বিল উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন উপজেলা প্রকৌশলীসহ সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পরবর্তীতে লুটপাটে জড়িতদেরই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে উপজেলা প্রকৌশলী তদন্তের কাগজপত্র গায়েব করে ফেলেন।

এফএ/জিকেএস