কাঁচামরিচের কেজি ৫০০ টাকা
ফরিদপুরে খুচরা বাজারে ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। তারা অভিযোগ করছেন, সিন্ডিকেটের কারণে এভাবে দাম বাড়ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেত ক্ষতি এবং আমদানি বন্ধ থাকায় দাম বেড়েছে।
ফরিদপুর জেলার মধ্যে মরিচ উৎপাদনে বিখ্যাত মধুখালী উপজেলা। মধুখালী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচ আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২০ হেক্টর বেশি।
ফরিদপুর শহরের হাজী শরিয়ত উল্লাহ বাজারের ব্যবসায়ী চুন্নু মণ্ডল জানান, স্থানীয় তাম্বুলখানা বাজারের মরিচ সাড়ে ৪০০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মরিচের সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ী সোহেল রানা জানান, বাজারে মরিচের আমদানি তুলনামূলক অনেক কম। তাই দামও বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে পাইকারিতে কাঁচামরিচ কেজি প্রতি সাড়ে ৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
শহরের অম্বিকাপুর বাজারে খুচরা ব্যবসায়ী মো. আবুল শেখ জানান, এক কেজি খুচরা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা দরে। সকালে আড়ত থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে মরিচ কিনে বাজারে ১২০ টাকা পোয়া করে বিক্রি করছেন।
ক্রেতারা জানান, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে কাঁচামরিচের দাম এভাবে বাড়লে সংসার চালাবো কীভাবে? রান্না করতে তো মরিচ লাগবেই। এখন কাঁচামরিচের দামে হাঁপিয়ে উঠছি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সুষ্ঠু তদারকির অভাবে দাম বাড়ছে পণ্যের।
ক্রেতারা আরও জানান, গত সপ্তাহে মরিচের দাম কম ছিল। এক সপ্তাহেই দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এটা কীভাবে হয়। দাম বাড়বে মানে যদি সেটা দ্বিগুণ হয়, তাহলে বুঝতে হবে সিন্ডিকেটের কারণে এটা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, মধুখালী উপজেলায় যে মরিচ চাষ হয় তা এক মৌসুমি মসলা জাতীয় ফসল। এখন মরিচের মৌসুম প্রায় শেষ। কৃষকরা এখন মরিচ ক্ষেতে কুমড়া, শসা চাষ করছেন। এ এলাকা উঁচু হওয়ায় কৃষকরা মরিচ চাষ করেন। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে এর ফলন পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে এর ভালো ফলন পাওয়া গেলেও এ বছর ফলন ভালো হয়নি।
মধুখালী উপজেলার মরিচ চাষি শিলা রায় জানান, এ বছর মরিচ চাষ করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। প্রথমে খরায় গাছের ক্ষতি, তারপর বৃষ্টিতে ফলনের ক্ষতি। ক্ষেতে এখন কোনো মরিচ নেই। মরিচের ক্ষেতে কুমড়ার চাষ করেছি।
মধুখালী বাজারের পাইকার ব্যবসায়ী মো. আলম শেখ জানান, বাজারে এখন মরিচ নেই বললেই চলে। এখন যে মরিচ আসছে তা ঝিনাইদহ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গার। বৃহস্পতিবার মধুখালী বাজারে পাইকারি ৪৫০-৪৮০ টাকা কেজি দরে মরিচ ক্রয় করা হয়।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ বলেন, আমরা বেশ কয়েকদিন ধরে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। তবে বাজারে কাঁচামরিচের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে কাল থেকেই নিয়মিত মনিটরিং শুরু হবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এখন কাঁচামরিচের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। এবার ফলন কম, এজন্য বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহও কম। ক্ষেতে যে মরিচ আছে তা গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কারণে বাজারে মরিচের দাম বেড়েছে।
এন কে বি নয়ন/জেডএইচ/জিকেএস