গাজীপুরে গ্যাস সংকট
জ্বলছে না বাসার চুলা, কারখানায় উৎপাদনে ধস
গাজীপুরে চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। ফলে জেলার কলকারখানাগুলোতে উৎপাদনে নেমে এসেছে ধস। আর গ্যাসের চাপ না থাকায় বাসা-বাড়ির চুলাও জ্বলছে না। তিতাস গ্যাস অফিসে জানালেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
তিতাস গ্যাস সূত্র জানায়, গাজীপুরের টঙ্গী, জয়দেবপুর, চন্দ্রা, মাওনা ও কালীগঞ্জ এলাকায় প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৫৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর গড়ে প্রতিদিন এখন পাওয়া যাচ্ছে ৩৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
গ্যাস সংকটের কারণে গাজীপুর মহানগর ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদনও কমে এসেছে।
গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া, বাসন সড়ক, শরীফপুর, কড্ডা, চান্দনা, কোনাবাড়ি, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সকাল ৬টার আগেই চুলায় গ্যাস থাকে না। পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে রান্না করেন। অনেক জায়গায় গ্যাস থাকলেও চুলা জ্বলছে মিটমিট করে।
গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসান বলেন, ৫ আগস্টের পর সাধারণ মানুষ নতুন করে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ ও চুলা বৃদ্ধির দাবি করে আসছে। যেহেতু সারাদেশে গ্যাসের মোট উৎপাদনের মাত্র ১২ ভাগ আবাসিকে ব্যবহার করা হয়। আর বাকি গ্যাস ব্যবহার হয় শিল্প ও বাণিজ্যিকভাবে। শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গ্যাসের অপব্যবহারে চুরি হয় বেশি। যা আবাসিকে হয় না। এক্ষেত্রে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে মানুষ দাবি জানিয়ে আসছে। বর্তমান সরকারও এ ব্যাপারে অনেকটা সম্মত বলে জেনেছি। কিন্তু এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলোর মালিকদের চাপে আগের সরকার আবাসিকে গ্যাস প্রদান থেকে বিরত ছিল।
গাছা থানার সোন্ডা এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের এলাকায় গ্যাস থাকে না। গ্যাসের চুলা খুলে রেখেছি। তারপরও মাসে মাসে বিল দিয়ে যাচ্ছি। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না। তাই বাধ্য হয়ে বাজার থেকে সিলিন্ডার কিনে রান্নার কাজ করছি।
গাজীপুরে একাধিক কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানায়, গত কয়েক মাস ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় অর্ধেকে নেমে এসেছে পণ্য উৎপাদন।
শিল্পমালিকদের অভিযোগ, প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা থাকলেও অনেক কারখানায় সেটি নেমে আসে মাত্র দু-তিনে। আবার কোনো কোনো কারখানায় নেমে এসেছে শূন্যতে। ফলে চাহিদা মতো উৎপাদন করতে না পারায় আর্থিক লোকসানে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার একটি কারখানার পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে গ্যাসের সংকটের কারণে তাদের কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদেশি অর্ডার সময় মতো দিতে না পারলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে। যে কারণে শ্রমিকদের বেতন সময় মতো পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নবীনগর-চন্দ্রা জোনাল মার্কেটিং অফিসের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম বলেন, এটা একটা জাতীয় সমস্যা। আমাদের সিস্টেমে গ্যাস কমে গেছে। যতদিন পর্যন্ত জাতীয়ভাবে গ্যাসের সমস্যার সমাধান না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই সমস্যা আমাদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়।
মো. আমিনুল ইসলাম/জেডএইচ/জিকেএস