ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

জেলা প্রতিনিধি | নারায়ণগঞ্জ | প্রকাশিত: ১১:৫৩ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়কজুড়েই বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে একেকটা খানাখন্দ ছোট-বড় পুকুরে পরিণত হয়। সব মিলিয়ে বেহাল হয়ে পড়েছে এই সড়কটি। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে এই সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে এই সড়কটি একেবারেই যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য এক সময় প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহার হতো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়ক। নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দাদেরও ঢাকায় যাতায়াতের জন্য অন্যতম মাধ্যম ছিল এই সড়কটি। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালের দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দ্রুত যাতায়াতে রুটটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর দীর্ঘ কয়েক যুগেও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কটিতে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের পঞ্চবটি থেকে চাষাঢ়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ, পাথর ও খোয়া উঠে গেছে। সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা সড়ক দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চালাতে হচ্ছে। সড়কের দু’পাশের শোল্ডারিং ভেঙে গেছে। সড়কে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেই কাদামাটির গর্তে প্রায়ই যানবাহনের চাকা আটকা পড়ে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

এছাড়া বৃষ্টি হলেতো বলারই অপেক্ষা থাকে না। বড় বড় গর্তগুলো একেকটা পুকুরে পরিণত হয়ে যায়। প্রায় সময়ই এ সড়কে উল্টে যায় যানবাহন। একেকটা বিশাল গর্ত যেন মৃত্যুফাঁদ হিসেবে দেখা দেয়। সেইসঙ্গে দুর্ঘটনায় হরহামেশাই আহত হন এ পথে চলাচলকারী মানুষজন। প্রায় সময় এখানে নষ্ট হয়ে যায় যানবাহন। মাঝ সড়কে বিকল হয়ে যাওয়া যানবাহন যেন ভোগান্তি ও যানজট বৃদ্ধি করে বহুগুণ।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটি সংলগ্ন শাসনগাঁওয়ের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় আছে অন্তত সহস্রাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। যাতে অন্তত ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। ফতুল্লার মুন্সিখোলা এলাকায় রড সিমেন্টের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র, আলীগঞ্জ ও দাপায় পাথর ও বালু ব্যবসা, ফতুল্লার পঞ্চবটি, নরসিংপুর, বক্তাবলী এলাকায় শতাধিক ইটভাটা, বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক রি-রোলিং মিল, পঞ্চবটিতে মেঘনা ও যমুনা পেট্রোলিয়াম তেলের ডিপো অবস্থিত।

এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, তেলের ডিপোর ট্যাংকলরিসহ কয়েক হাজার যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচল করছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়ক দিয়ে। মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকায় গড়ে ওঠা শাহ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, ক্রাউন সিমেন্টসহ বেশ কিছু কারখানার কয়েকশ কাভার্ডভ্যানও প্রতিনিয়ত সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করছে। এছাড়া গণপরিবহনতো আছেই। আর সবার কাছেই বর্তমানে রাস্তাটি সীমাহীন দুর্ভোগের অপর নাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সামাজিক সংগঠন ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র সভাপতি হাজী নুরু উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সড়কটিকে কেন্দ্র করে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এ সড়কটিকে সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ের অভাবে সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না। আমাদের দাবি সড়কটি যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর বলেন, নানা কারণে সড়কটিকে মৃতপ্রায় বলা চলে। আমরা এরইমধ্যে সড়কটিতে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়েছি। পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন কারখানার মালিকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ জন লোক নেওয়া হবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য। তাদের আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করবো। যাতে করে যানজট কিছুটা দূর করা যায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা একাধিকবার নারায়ণগঞ্জ সওজকে বলেছি সাময়িকভাবে হলেও সড়কটি সংস্কার করে দেন। তারা বলে এই সড়কটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নয়। ঢাকা থেকে টেন্ডার না হলে এই সড়কের সংস্কার কাজ করা সম্ভব না। দুই মাস আগে এই সড়ক নিয়ে ঢাকার সওজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা তখন আমাদের জানিয়েছিল, চায়না কোম্পানির ওই প্রজেক্টের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই সড়কের কাজ শুরু করা সম্ভব না। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করানোর। সংস্কার কাজ হয়ে গেলে সড়কটিতে আর যানজট থাকবে না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, এ সড়কটি আমাদের অধীনে না। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র একটি চিঠি দিয়েছেন আমাদের অধীনে দেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে আমাদের আর দেওয়া হয়নি। আমাদের অধীনে থাকলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও সংস্কার কয়ে দেওয়া যেতো।

এফএ/এএসএম