ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

৪০০০ টাকার সুদ সাতমাসে দেড়লাখ! বসতভিটা লিখে নিলেন এনজিও মালিক

জেলা প্রতিনিধি | গোপালগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৫:০৯ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ফুলপাড় গ্রামের গৃহিণী হালিমা বেগম। করোনাকালীন ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন স্থানীয় দারিদ্র্য বিমোচন বহুমুখী সমবায় সমিতি নামের একটি এনজিও থেকে। ৪৪ কিস্তিতে ১০৫০ টাকা করে ৪৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বাকি ছিল চার হাজার টাকা। এই টাকা না দিতে পারায় সাত মাসে সুদ বেড়ে দাঁড়ায় দেড়লাখ টাকাতে।

এর একমাস পরেই টাকা না দিতে পারায় হালিমার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বসতবাড়ি লিখে নেন এনজিওর মালিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভাই দেলোয়ার হোসেন। কিছুদিন আগে বাড়িটি অন্যত্র বিক্রি করে দেয় দেন দেলোয়ার। নিজের বসতভিটা হারিয়ে অন্যের ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন হালিমা ও তার পরিবার।

এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার পর টাকা পরিশোধ না হলে সুদের পরিমাণ বাড়িয়ে অস্ত্রের মুখে লিখে নেওয়া হয় বসতভিটা। এমন অভিযোগ উঠেছে জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দারিদ্র বিমোচন বহুমুখী সমবায় সমিতির মালিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভাই দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন ঋণ দিয়ে ইচ্ছেমত সুদের হার বাড়িয়ে বসতভিটা লিখে নিয়ে নিঃস্ব করেছেন উপজেলার অর্ধশতাধিক পরিবারকে। ভুক্তভোগীরা নিজ বসতভিটা ফিরে পেতে এবং উপযুক্ত শাস্তি চেয়ে দারস্থ হয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। এরমধ্যে ১০ জন বাদী হয়ে ১০টি মামলাও করেছেন।

তারা হলেন মুকসুদপুর উপজেলার ডাঙ্গাদুর্গাপুর গ্রামের মিলু মোল্যার স্ত্রী জাহানারা বেগম, একই গ্রামের লিয়াকত গাজীর স্ত্রী সাহিনা বেগম, রবিউল শেখের স্ত্রী হালিমা বেগম, নুরু মোল্যার স্ত্রী আসমা বেগম, পার্শ্ববর্তী ফুলারপাড় গ্রামের লিটন মুন্সির স্ত্রী রিপা বেগম, একই গ্রামের লিয়াকতের ছেলে তুহিন, পার্শ্ববর্তী সালিনাবক্সা গ্রামের মামুন শেখের স্ত্রী কাকলি বেগম, একই গ্রামের দেলোয়ার সরদারের স্ত্রী বিউটি বেগম ও পার্শ্ববর্তী ডাকপাড় গ্রামের হাজি রুস্তুম শেখের ছেলে ফরিদুল ইসলাম।

মুকসুদপুর উপজেলার ফুলারপাড় গ্রামের গৃহিণী হালিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার সময় ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম দারিদ্র্য বিমোচন বহুমুখী সমবায় সমিতি থেকে। ৪৪ কিস্তিতে ১০৫০ টাকা করে ৪৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিলাম। বাকি ছিল চার হাজার টাকা। ওইসময় চার হাজার টাকা না দিতে পারায় সাত মাসে সুদ বানিয়েছে দেড়লাখ টাকা। একমাস পরে তাদের দেড় লাখ টাকা আমরা দিতে পারিনি। পরে আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বসতবাড়ি লিখে নেন এনজিওর মালিক দেলোয়ার হোসেন। এখন পরিবার নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকছি।’

আরেক ভুক্তভোগী লিটন মুন্সি বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিই। পরে ৩৯ কিস্তি পরিশোধ করেছি। বাকি ছিল সাত কিস্তি। করোনার সময় সাত কিস্তি না দিতে পারায় কয়েকমাস পরে এসে বলে সুদ তিন লাখ টাকা হয়েছে। ওইসময় আমি টাকা দিতে পারিনি। এর কিছুদিন পরে এসে বলে ছয় লাখ টাকা হয়েছে সুদ। পরে আমার জমির পাওয়ার চায় (পেতে চায়)। আমি রাজি না হলে জোরপূর্বক তার বাড়িতে আটকিয়ে জমির পাওয়ার নিয়ে নেয়। পরে দেলোয়ারের রেজিস্ট্রেশন করা পিস্তল দিয়ে গুলি করার ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে জমি লেখিয়ে নেয়।’

তিনি আরও বলেন, আমি প্রশাসনের কাছে দরখাস্ত দিয়েছি। মামলাও করেছি। আমি আমার জমি ফেরত পাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে দারিদ্র্য বিমোচন বহুমুখী সমবায় সমিতি অফিসে গেলে মালিক দেলোয়ার হোসেনকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান বলেন, এনজিওর এই বিষয়টা জানা ছিল না। অভিযোগে হত্যার হুমকি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা থানা পুলিশের কাজ। তবে আমি জানামাত্রই ওসিকে তদন্ত করতে লিখিত আকারে জানিয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে খুব শিগগির আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসআর/জেআইএম