বরিশাল
সড়ক-মহাসড়কে অটোরিকশার দাপট, দুর্ঘটনা-যানজট লেগেই আছে
‘আগের তুলনায় এহন বরিশাল সিটিতে ব্যাপক অটোরিকশা (থ্রি হুইলার) বাইরা গেছে, এত বাড়ছে যে রাস্তায় গাড়ি চালাইন যায় না। এহন হারা দিন গাড়ি চালাইয়াও এক হাজার টাহা ইনকাম হরতে কষ্ট হইয়া যায়। মাঝে মাঝে জোমার টাহাও উডাইতে পারি না।’
ক্ষোভের সঙ্গে এসব কথা বলছিলেন বরিশাল নগরীর সিএন্ডবি পোল এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক সিরাজুল ইসলাম।
শুধু সিরাজুল নয়, রাস্তায় যানজটের কারণে এমন অভিযোগ এখন সব শ্রেণি চালকের। কয়েক বছরের ব্যবধানে বরিশাল নগরীতে দেদারছে বেড়েছে সব ধরনের যানবাহন। তবে এরমধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে অটোরিকশা। কারণ এসব বাহন তৈরি করতে লাগে না কোনো বৈধতা। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্কশপে যত্রতত্র যেখানে সেখানে তৈরি হচ্ছে অটোরিকশা।
আরেক অটোরিকশা চালক মিলন হাওলাদার বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে বরিশাল নগরীতে অটোরিকশা চালাই, কিন্তু বছর খানেক ধরে যে হারে অটোরিকশা বাড়ছে তা চিন্তার বাইরে। এত গাড়ি বাড়ার কারণে ১০ মিনিটের পথ যাইতে লাগে ২৫-৩০ মিনিট। এতে যেমন সঠিক সময়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না তেমনি আয়ও কমে গেছে অনেক।
বিকাশ কোম্পানির এক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও ট্রাফিক পুলিশ প্রতিদিন অফিসে যাওয়া-আসার পথে গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে। অথচ নগরীতে প্রতিদিন হাজার হাজার অবৈধ অটোরিকশা রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তা দেখেও যেন দেখছে না। এসব অটোরিকশার যেমন নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র, তেমন চালকদেরও নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে এসব চালকদের কারণে।
একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রাইভেটকার চালক হারুন জানান, অটোরিকশার জন্য নগরীতে প্রবেশ করা যায় না। সকাল-সন্ধ্যা যানজট লেগেই থাকে। বিভিন্ন সময় তারা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। পরে দেখা যায়, অটো চালকের কোনো লাইসেন্স নেই। যারা আগে রিকশা চালাতো তারাই এখন অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র তৈরি হচ্ছে তিন চাকার যান অটোরিকশা। প্রতিদিন একাধিক ওয়ার্কশপে হলুদ অটো বানিয়ে রাস্তায় ছাড়ছে। আর এর প্রভাবে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে পুরো নগরী জুড়ে।
অনেকের মতে বরিশাল নগরী এখন অটোরিকশার নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি অলিগলি থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়ক সবখানেই অটোরিকশার দাপট। এসব যানের বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকায় একদিকে সরকার যেমন মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি প্রতিদিন একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
বরিশাল নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় অটোরিকশা তৈরি করা ফাহিম ওয়ার্কশপের মালিক ফিরোজ গাজী বলেন, সরকার যদি ওয়ার্কশপে অটো তৈরি বন্ধ করতে বলে তাহলে আমরা বন্ধ করে দেবো। এছাড়া অটোরিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি করা বন্ধ করুক, তাহলে আর এগুলো তৈরি হবে না।
আরেক ওয়ার্কশপ মালিক বলেন, আমরা শুধু কাস্টমারদের কাছ থেকে অটো তৈরির অর্ডার নেই। তাদের পছন্দ অনুযায়ী সেগুলো বানিয়ে দেই। এখন তারা যদি অনুমতি না নিয়ে সেগুলো রাস্তায় ছাড়ে সেখানে আমাদের কি করার আছে।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন বা বিআরটিএ এখন অটোরিকশার জন্য কোনো লাইসেন্স দেয় না। প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিট মানির বিনিময়ে এগুলো রাস্তায় চলে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অচিরেই এসব ওয়ার্কশপগুলোতে লোক পাঠানো হবে। যাতে নিয়মের বাইরে গিয়ে আর কেউ অটোরিকশা তৈরি করে রাস্তায় নামাতে না পারে। এছাড়া যানজট নিরসনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
শাওন খান/জেডএইচ/এমএস