শেরপুরে বন্যায় কৃষি খাতে ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা
ভয়াবহ বন্যার কবলে শেরপুরের পাঁচ উপজেলা। তিন দশকেও এত ভয়াবহ বন্যা দেখেনি শেরপুরবাসী। মহারশী আর চেল্লাখালী নদীর তীরবর্তী বাঁধের ভাঙনে লন্ডভন্ড স্থানীয় কৃষকদের স্বপ্ন। কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে এবারের বন্যায় শুধু কৃষি খাতেই ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষক সামাদ মিয়া। এবছর ৩০ বিঘা জমিতে করেছিলেন আমনের চাষ। গেলো শুক্রবারের বন্যায় ভেসে গেছে তার ফসলের খেত। ধার-কর্যের মূলধন সব হারিয়ে দিশেহারা তিনি। সামাদ মিয়া বলেন, আমার সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। খেতের একটা ধানও তুলতে পারবো না।
একই অবস্থা দড়িকালীনগর গ্রামের রমিজ মিয়ারও। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলেন ৫০ বিঘা জমিতে। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। রমিজ মিয়া বলেন, ৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা আমরা কখনো দেখি নাই।
শুধু সামাদ ও রমিজ মিয়াই নন, শেরপুর জেলায় এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার কৃষক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ি উপজেলায়।
এখনো পানিতে তলিয়ে আছে প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমির আবাদ। এই ক্ষতিতে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা কৃষকদের।
এদিকে আমনের পাশাপাশি আগাম সবজি ও মৌসুমি সবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে। সবজি আবাদে এবারের বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৬০ কোটি টাকার। প্রণোদনা ও আর্থিক সহযোগিতা না করলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় দাবি কৃষকদের।
লছমনপুর এলাকার কৃষক ফরিদ বলেন, আগাম সবজির আবাদ করছিলাম। প্রায় লাখ খানেক টাকা খরচ করেও খেতের সবজি থেকে এক টাকাও আয় হলো না।
কৃষি বিভাগ বলছে, এবারের বন্যায় প্রায় দুই লাখ কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন শেরপুরের খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস।
তিনি বলেন, এখনো অনেক জায়গায় বন্যার পানি। যার কারণে ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি নেমে গেলেই বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইমরান হাসান রাব্বী/জেডএইচ/এমএস