শেরপুরে রাতভর পানিবন্দিদের উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবীরা
শেরপুরে টানা বর্ষণ আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিন উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই নদীর পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। শুক্রবার সকাল থেকেই ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা পানিবন্দি মানুষের উদ্ধার করেন। তবে সন্ধ্যার পর থেকে বিজিবি উদ্ধার কাজ বন্ধ রাখলেও রাতভর বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দিদের উদ্ধারে সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের চারটি নদীতে পানি বাড়তে থাকায় এই বন্যা দেখা দেয়। পাহাড়ি ঢলে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে এখনো ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার অনেক মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পারেনি। উদ্ধার কাজে অংশ নেন ঝিনাইগাতী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্কাউট সদস্য ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।
রাতভর পানিবন্দিদের উদ্ধারে সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। স্থানীয় সংগঠনের পাশাপাশি উদ্ধার কাজে অংশ নেন শেরপুর ও ময়মনসিংহের স্বেচ্ছাসেবী রেসকিউ টিমও। তবে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল না থাকায় উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয় তাদের।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। মহারশীর বাঁধ ভেঙে এবং নদীর পানি উপচে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, বনকালি, চতল ও আহম্মদ নগর, ধানশাইল ইউনিয়নের ধানশাইল, বাগেরভিটা, কান্দুলী, বিলাসপুর ও মাদারপুর এবং কাংশা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর চরণতলা, আয়নাপুর, কাংশাসহ অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়।
বৈরাগীপাড়া এলাকার বাসিন্দা রহমান মিয়া বলেন, সবাই বেড়াতে যাওয়ায় বাড়িতে আমি একাই ছিলাম। ভোরে হঠাৎ বন্যার পানিতে আমি আটকা পড়ি, ঘরের খাটও পানিতে ডুবে ছিল। সন্ধ্যার আগে স্কাউট সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে।
রামেরকুড়া এলাকার জমির আলী বলেন, বন্যার পানিতে আমরা খুবই বিপদে পড়েছিলাম। পানির স্রোতে মনে হচ্ছিল বাড়ি ভেঙে নিয়ে যাবে। বিকেলে আমাদের সবাইকে উদ্ধার করে ফায়ায় সার্ভিসের সদস্যরা।
এদিকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও উদ্ধারকাজে যোগ দেন। রাতেও পানিবন্দিদের উদ্ধারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
ইয়্যুথ চেঞ্জ মেকার বাংলাদেশ টিমের প্রেসিডেন্ট নাইমুর রহমান তালুকদার বলেন, ঝিনাইগাতীতে এই মুহূর্তে জরুরি ভলান্টিয়ার সাপোর্ট দরকার। আমরা যতটুকু পারছি চেষ্টা করছি। এর বাইরেও আরও স্বেচ্ছাসেবী প্রয়োজন। রাতের মধ্যে রেসকিউ শেষ করতেই হবে। সকাল থেকে খাবার বিতরণ শুরু করবো আমরা।
ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুল হক মনির বলেন, যেকোনো দুর্যোগে আমরা মানুষের পাশে আছি। আমাদের সদস্যরা সকাল থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে এবং পানিবন্দিদের রেসকিউ করছে। এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, এই দুর্যোগে সবাইকে নিয়েই আমরা কাজ করছি। স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্দান্ত কাজ করছেন। আমরা একসঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করছি। এরইমধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমাদের এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবো।
এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ০৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ রাত থেকে ০৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত অতি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) এর অধীনে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
বিজিবির ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) এসজিপি, পিএসসি পরিচালক অধিনায়ক মো. ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই বন্যায় স্থানীয় জনসাধারণের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় প্লাবিত জনসাধারণকে বিজিবি সদস্য কর্তৃক সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় ৪ অক্টোবর আনুমানিক ৮৫০ জন বন্যা কবলিত জনসাধারণকে তাদের পরিবারের কাছে ও নিকটবর্তী উঁচু নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিজিবির পক্ষ থেকে আনুমানিক দুইশো বন্যার্ত মানুষের কাছে শুকনো খাবার হিসেবে (মুড়ি, চিড়া, গুড় ও বনরুটি) এবং দেড়শো জনের মাঝে রান্না করা রাতের খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিজিবি কর্তৃক বন্যার্তদের মাঝে খাবার এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চলমান থাকবে।
ইমরান হাসান রাব্বী/এফএ/এমএস