ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

স্কুলভবন আছে, নেই শুধু শিক্ষার্থী

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ০৫:৩৬ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

গ্রামীণ পথ দিয়ে পায় হেঁটে যেতে হয় ঝালকাঠির রাজাপুরে অবস্থিত ১২১ নম্বর নিজ গালুয়া মরহুম ফজলুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দোতলা আধুনিক ভবন, শ্রেণিকক্ষ, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ, খেলার মাঠ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শিক্ষক সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। কিন্তু নেই কোনো শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় প্রতিমাসে বিদ্যালয়টির পেছনে সরকারের লক্ষাধিক টাকা অপব্যবহার হচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও উপস্থিত নেই। অফিস কক্ষে গল্পে মশগুল পাঁচজন শিক্ষক-শিক্ষিকা।

স্থানীয়রা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শুধু কাগজপত্রেই আছে। বাস্তবে এটাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলে মনে হয় না। কারণ এখানে শিক্ষক আছে, অথচ তেমন শিক্ষার্থী নেই। প্রতিদিন শিক্ষকরা সকালে স্কুলে এসে হাজির দেন। এরপর ছুটির সময় শেষ হওয়ার আগেই বাড়িতে চলে যান।

স্কুলভবন আছে, নেই শুধু শিক্ষার্থী

তারা আরও জানান, স্কুলে অডিটের সময় পার্শ্ববর্তী সিরাতুন নবী (সা.) মডেল মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের এনে এই স্কুলের শিক্ষার্থী দাবি করে দেখানো হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজিস্ট্রার ও কাগজপত্রে ৫১ জন দাবি করলেও শ্রেণিকক্ষের হাজিরা খাতায় ৫৪ জনের নাম পাওয়া যায়। তবে নিয়মিত হাতেগোনা ৩-৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে আসে। অথচ উপবৃত্তির জন্য প্রতিদিন হাজিরা খাতায় শতভাগ উপস্থিতি দেখানো হয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাতিমা বেগম বলেন, প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম তবে নিয়মিত ৩-৫ জন শিক্ষার্থী আসে। তবে হাজিরা খাতায় উপবৃত্তির ক্ষেত্রে সবাইকে উপস্থিতি দেখানো হয়। তবে কেন দেখানো হয় সেটা তিনি জানেন না।

উপবৃত্তি দিলেও তারা কেন স্কুলে আসে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের টিফিনের বিরতিতে অফিস কক্ষে বসে হাজিরা দিয়ে দেই। আজ কোনো শিক্ষার্থী না থাকায় হাজিরা নেওয়া হয়নি। ওরা নুরানি মাদরাসায় যায়। আমরাতো ওদের জোর করতে পারি না।’

স্কুলভবন আছে, নেই শুধু শিক্ষার্থী

সিরাতুন নবী (সা.) মডেল মাদরাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘১২১ নম্বর নিজ গালুয়া মরহুম ফজলুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী আমার মাদরাসায় পড়ে না। বরং যখন ওই স্কুলে অডিট আসে তখন আমার মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের স্কুলের শিক্ষার্থী বলে কর্তৃপক্ষকে দেখানো হয়।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজম খান ক্যামেরার সামনে ভিডিও বক্তব্য দিতে রাজি না হয়ে বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষার্থী না থাকলে নাই, অসুবিধা কী? আমরাতো আর কোথাও নিয়ে রাখি নাই। স্কুলের শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী নুরানি মাদরাসায় পড়ে। যে কারণে স্কুলে আসে না।’

স্কুলভবন আছে, নেই শুধু শিক্ষার্থী

আপনার স্কুলের শিক্ষার্থীরা কেন নুরানি মাদরাসায় পড়ে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আরবি পড়ার জন্য ওই মাদরাসায় যায়।’

রাজাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তার হোসেন ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, উপজেলায় এরকম ৩-৪টি স্কুল রয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের জন্য সুপারিশ করা হবে।

আতিকুর রহমান/এসআর/এএসএম