নানা সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত গাংনীবাসী
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির একটি আধুনিক ভবন নির্মিত হলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। এখানে আধুনিক ও সুসজ্জিত অপারেশন থিয়েটার থাকলেও অপারেশন বন্ধ পাঁচ বছর ধরে। এক্স-রে মেশিন থাকলেও নেই ফিল্ম। জেনারেটরটিও চালু হয়নি। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি কয়েক মাস ধরে বন্ধ। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, সব সংকট কাটিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয় নতুন ভবন। এখানে মোট চিকিৎসকের পদ ৩০টি। বিশেষজ্ঞ পদ পূরণ হয়নি দীর্ঘদিনেও। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মোট ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এ হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র ১১ জন। যদিও খাতা-কলমে দায়িত্ব পালন করছেন ১২ জন।
জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জিক্যাল) একজন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ডেপুটিশনে রয়েছেন। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের পদটি শূন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্মলগ্ন থেকে। ইনডোর ও আউটডোর সেবাটি সেকমো (সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) ও সাব-সেন্টারের চিকিৎসক দিয়ে চালানো হচ্ছে। তবে নার্স সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক বাইরের ক্লিনিকে অপারেশন করেন। অথচ কমপ্লেক্সটিতে তাদের দিয়ে অপারেশন করানো হয় না। এই চিকিৎসকদের দিয়ে অপারেশন করানোর কোনো অনুমতি নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর ফায়দা লুটছে বিভিন্ন ক্লিনিক।
একটি সূত্র জানায়, অনেক ভালো চিকিৎসক বদলি হয়ে এসেছিলেন এখানকার লোকজনকে সেবা দিতে। কিন্তু কতিপয় ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন না করার জন্য হুমকি দেওয়া ছাড়াও মারধর করার কারণে ডাক্তাররা থাকতে চাননি। বর্তমানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। অপারেশন না করায় যেমন গরিব অসহায় রোগীদের অর্থ গচ্ছা যাচ্ছে, তেমনি ফায়দা লুটছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
এ উপজেলার কাজিপুরের মৌমিনুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়েছে গাংনী রবিউল ক্লিনিকে। স্বল্প আয়ের মানুষ অথচ খরচ করতে হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হলে কোনো অর্থ খরচ হতো না।
একই কথা জানান তিরাইল গ্রামের খোকন। তার স্ত্রীকে সিজার করান রাজা ক্লিনিকে। এখানে ওষুধ, বেড ভাড়া আর ডাক্তার বাবদ খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা।
এদিকে অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি বন্ধ রয়েছে দুই মাস ধরে। তেল পাম্পে আড়াই লাখ টাকা বকেয়া থাকায় পাম্প কর্তৃপক্ষ আর তেল দিচ্ছে না। ফলে এ সেবাটি বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি বা গুরুতর রোগীকে কোথাও নিতে হলে বাইরে থেকে চড়া দামে ভাড়া নিতে হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী জানান, তিনি চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অপারেশন করাতে হলে সরকারি কিছু নিয়ম রয়েছে। বাইরে যে চিকিৎসক অপারেশন করেন তাতে কোনো বাধা না থাকলেও সরকারি নিয়মে সেটি রয়েছে। চিকিৎসক সংকট কাটিয়ে উঠলে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।
আসিফ ইকবাল/জেডএইচ/জিকেএস