বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির স্বীকৃতি চান ১১৯ বছরের রাম সিং
মৌলভীবাজারের বাসিন্দা রাম সিং গড়। শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী গ্রাম মেকানী ছড়ায় বসবাস করেন তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ রাম সিং। তার জন্ম ১৯০৫ সালের ৬ আগস্ট।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি ইংল্যান্ডের জন আলফ্রেড টিনিসউড। তার বয়স ১১১ বছর। আর রাম সিং গড়ের বয়স ১১৯ বছর। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০ বছর আগে দাদার সঙ্গে রাম সিংয়ের বাবা বুগুরাম গড় ভারতে মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে চা শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। তার বাপ-দাদার হাত ধরে শুরু হয় এদেশে চা চাষ। শ্রীমঙ্গল পৌর শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের গ্রাম মেকানী ছড়া। ওই গ্রামের প্রবীণ রাম সিং গড়।
জাতীয় পরিচয়পত্রে রাম সিংয়ের জন্মতারিখ লেখা রয়েছে ৬ আগস্ট ১৯০৫। তার বাবার নাম বুগুরাম গড়। মা কুন্তী গড়।
আলাপচারিতায় রাম সিং জানান, তার বাবার আদি ভূমি ছিল ভারতে। চা চাষের জন্য তার বাবা এবং দাদা এই এলাকায় প্রথম আসেন। তার দাদা ও বাবার হাতে প্রথম পুটিয়াছড়া চা বাগান সৃজন হয়। তার হাতে সৃজন হয় হরিণছড়া চা বাগান। যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয় ১৯১৪-১৫ সালে, তখন তিনি ছিলেন বাগানের চৌকিদার। ইংরেজদের কাছে ওই যুদ্ধের কথা শোনেন। ১৯৩৯-৪০ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়। সেই খবরও পান ইংরেজদের কাছ থেকে।
শ্রীমঙ্গলের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বলেও জানান রাম সিং। তখন ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একপাশে পাকা ঘর, লোহার পিলার ছিল। আরেক পাশে ছিল ছনের ঘর। তখন তিনি মৌলভীবাজার সড়কের কোনো এক আচার্যের বাড়িতে থেকে পড়তেন। এসময় শ্রীমঙ্গলে পাকা সড়ক হয়নি।
রাম সিংয়ের ভাষ্যমতে, তখন পাকাঘর বলতে শ্রীমঙ্গল পুরাতন বাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংক, রামরতন বানিয়ার বাসা ও জগন্নাথ জিউর আখড়ার পশ্চিমে ত্রিপুরা রাজার বাংলো (রাজ কাচারি) ছিল। মাঝেমধ্যে ত্রিপুরা রাজা হাতির পিঠে চড়ে এই বাংলোয় এসে থাকতেন। এখান থেকে খাজনা আদায় করতেন। চা বাগানে নিজস্ব ট্রলি দিয়ে পাতা আনা-নেওয়া করা হতো। সেই ট্রলির লাইন স্থাপনও তিনি দেখেছেন।
শ্রীমঙ্গলের প্রবীণ শিক্ষক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, রাম সিং যেসব বর্ণনা দিয়েছেন তাতে নিঃসন্দেহে অনুমান করা যায়, তিনি একজন অতিপ্রবীণ মানুষ। আমার বয়স ৮০ বছর। ছোটবেলায় আমি পুরানবাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংকের ভগ্নাংশ দেখেছি। আর শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ১৯২৪ সালে স্থাপিত হলেও প্রাথমিক শাখা স্থাপিত হয়েছে তারও অনেক আগে। যেহেতু ভোটার আইডি কার্ডে তার জন্ম লেখা রয়েছে ১৯০৫ সালে, সে হিসেবেও তার ১১৯ বছর। গিনেস বুকে তার নাম পাঠানো উচিত।
হরিণছড়া চা বাগানের ৮০ বছর বয়সী নিরেণ হাদিমা জানান, তিনি ১৯৬১ সালে হরিণছড়া চা বাগানের স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। তখনই তিনি রাম সিং গড়কে দেখেছেন বৃদ্ধ।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব জাগো নিউজকে বলেন, ‘এনআইডি অনুযায়ী উনার বয়স ১১৯ বছর। আমরা বিষয়টির তদন্ত করছি। আরও যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে, যাতে তিনি স্বীকৃতি পান।’
ওমর ফারুক নাঈম/এসআর/জিকেএস