ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রং-স্বাদ বদলে চাহিদা বেড়েছে আশ্বিনা আমের

জেলা প্রতিনিধি | রাজশাহী | প্রকাশিত: ০৭:৪৮ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এতদিন রাজশাহীতে অন্য সব আমের দাম চড়া থাকলেও ব্যতিক্রম ছিল আশ্বিনা। মানুষের কাছে এই আমের চাহিদা ছিল কম। এসব আমের বেশিরভাগই চলে যেত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য হিসেবেই। রং আর স্বাদের জন্যই মূলত চাহিদা ছিল না এই আমের। তবে গত আট বছরে আশ্বিনা আমের রং ও স্বাদ বদলে গেছে। ফলে এই আমের চাহিদার পাশাপাশি চাষও বেড়েছে। তৈরি হয়েছে রপ্তানির সম্ভাবনা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের মোট বার্ষিক আম উৎপাদন প্রায় ১২ লাখ টন। এর প্রায় ১৫ শতাংশই আশ্বিনা। আশ্বিনা আমের মোট বার্ষিক উৎপাদনের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে। বাকি অংশ আসে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও অন্যান্য জেলা থেকে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজশাহী অঞ্চলে ৭৪০ হেক্টর জমিতে চাল হয় আশ্বিনা আমের। এসময় উৎপাদন হয় ৯ হাজার ২৫০ টন আম। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এই আমের চাষ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৯ হেক্টর। উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫২৭ টন। গত আট বছরে চাষ বেড়েছে এক হাজার ৬৯ হেক্টর। ফলন বেড়েছে ১৬ হাজার ২৭৭ টন।

রং-স্বাদ বদলে চাহিদা বেড়েছে আশ্বিনা আমের

কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালে আশ্বিনা আম চাষে ব্যাগিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে আমের স্বাদ যেমন বেড়েছে, রঙেরও উন্নতি হয়েছে। কীটপতঙ্গ থেকে আমগুলো রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো দামে, ১৬ হাজার টাকা মণ (কেজি ৪০০ টাকা)।

রাজশাহীর বাঘা অঞ্চলের আমচাষি মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে এই আমের তেমন দাম পেতাম না। কিন্তু বাপ-দাদা লাগিয়ে গেছে সেই গাছ কাটি কী করে, তাই রেখে দিয়েছি। ২০১৮ সালে ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ শুরু করি। এখনো গাছে আম আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত পরশু কিছু আম বাজারে নিয়েছিলাম। সেগুলো ১২ হাজার টাকা মণ (৩০০ টাকা কেজি) করে বিক্রি করেছি। বেশ ভালো দাম পাওয়ায় এখন নতুন করে এই আমের চাষ শুরু করেছি।’

রং-স্বাদ বদলে চাহিদা বেড়েছে আশ্বিনা আমের

রাজশাহীর কাঁটাখালি এলাকার চাষি এমদাদুল হক বলেন, ‘আশ্বিনা আম তেমন চাষ করা হতো না। এখন দাম বেশি পাওয়া যায়। ওজন ভালো। আগেতো আম টিকতোই না। এখন বেশ ভালো আম টেকে (নষ্ট হয় না)। মৌসুমের শেষের এই আমের দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই আশ্বিনা আমের চাষ নতুন করে বাড়িয়েছি।’

রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রোডিউসার সোসাইটির হাফিজুর রহমান খান বলেন, রাজশাহী থেকে বেশ কয়েক জাতের আম রপ্তানি হয়। এরমধ্যে ৫-৭টি জাতের আম বেশি রপ্তানি হয়। এখন আশ্বিনা আম রপ্তানির চেষ্টা চলছে।

রং-স্বাদ বদলে চাহিদা বেড়েছে আশ্বিনা আমের

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা জানান, ২০১৬ সালের আগে আশ্বিনা আম সাধারণভাবে চাষ হতো। এতে উৎপাদিত আমের বেশিরভাগই নষ্ট হতো। ২০১৬ সাল থেকে ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ করায় আশ্বিনা আমে চাষিদের ভাগ্য বদলে গেছে।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালে যখন এই আমগুলোতে ব্যাগিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তখন তিনটি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি ছিল স্বাদের পরিবর্তন। আমগুলো সময়ের আগে পাড়া না হওয়ায় এর মিষ্টতা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয়টি ছিল রঙের পরিবর্তন। বৃষ্টিতে না ভেজার কারণে এর রং অক্ষুণ্ন থাকে। তৃতীয়টি ব্যাগের কারণে আমে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না।

রং-স্বাদ বদলে চাহিদা বেড়েছে আশ্বিনা আমের

আশ্বিনা আম চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়ার কারণ হিসেবে উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এটি লেট জাতের আম। এই সময় অন্য আম তেমন থাকে না। তাই বর্তমানে আশ্বিনা আম উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়। এজন্য চাহিদাও বেড়েছে।

সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/এএসএম