আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ
চিকিৎসা চালাতে সর্বস্বান্ত, লেখাপড়া বন্ধের পথে সালেহর ছেলেদের
হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন সালেহ আহমেদ। শুরু থেকেই তার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। আন্দোলনে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতিটি হামলার সময় সামনে থেকেই লড়েছেন তিনি। দীর্ঘ লড়াইয়ে বড় কোনো আঘাত না পেলেও ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের ছোড়া গুলি পেটে বিদ্ধ হয় তার। সেদিন থেকেই প্রায় ১ মাস ছিলেন হাসপাতালের আইসিইউতে।
বিভিন্ন সময় খবরও ছড়িয়েছে সালেহ আহমেদ মারা গেছেন। কিন্তু মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেও ভালো নেই সালেহ আহমেদ। শরীর থেকে এখনও বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দেড় মাস ধরে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। অর্থকষ্টও দেখা দিয়েছে মারাত্মক। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে এরইমধ্যে সংসারের অবলম্বন গবাদি পশু (গাভি) বিক্রি করে দিয়েছেন। এই গাভির দুধ বিক্রি করেই চলতো তার সংসার ও দুই ছেলের লেখাপড়া। এখন সন্তানদের লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় অনেকটা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন আহত সালেহ আহমেদ ও তার স্ত্রী।
গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমেদের স্ত্রী হালিমা বলেন, স্বামী যুদ্ধ করেছেন দেশের জন্য। স্বামীকে নিয়ে আমি এখন যুদ্ধ করছি। অনেকেই আমাকে সাহায্য করছেন। তাদের অবদান ভোলার মতো নয়। আমি বাড়িঘরের সব বিক্রি করে শেষ করেছি। সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন গাভিও বিক্রি করেছি। এ গাভির দুধ বিক্রি করেই আমাদের সংসার চলতো। সন্তানদের লেখাপড়া চলতো। এখন বাকি জীবন কীভাবে চলবো সেটা ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়েছি।
তিনি বলেন, আমার দুই ছেলে হাফেজি পড়ছে। তাদের পড়া এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। স্বামীর চিকিৎসা এবং সন্তানদের পড়ালেখা চালানোর জন্য তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেন।
গুলিবিদ্ধ সালেহ আহমেদ বলেন, বুলেটের যন্ত্রণায় এখনো বিছানায় কাতরাচ্ছি। পেটে এখনো বুলেট আছে। চিকিৎসকরা বলেছেন অপারেশন করে গুলি বের করতে হবে। আমি সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই। আমি সুস্থ হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আগের মতো করে বাঁচতে চাই।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হক সেলিম বলেন, হবিগঞ্জ পৌর বিএনপির ৭নং ওয়ার্ড শাখার অর্থ সম্পাদক সালেহ আহমেদ। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। অসংখ্য মামলার আসামি হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৪ আগস্ট সাবেক এমপি মো. আবু জাহিরের বাসা থেকে ছোড়া গুলি তার পেটে বিদ্ধ হয়। তাকে চিকিৎসায় সহায়তা করায় সিলেট নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ছাত্র সমাজ, রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে এবং অন্যান্য আহতদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। এখন তার পরিবার এবং তাকে পুনর্বাসন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তাদের প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে আমি দেখা করছি। আমার সাধ্যমতো আমি তাদের প্রতিটি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি আমার দল ক্ষমতায় আসে তাহলে শহীদ এবং আহতদের পরিবারগুলোর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো হবে। পরিবারগুলের পুনর্বাসনের জন্য আমার দল এবং আমি সর্বোতভাবে চেষ্টা করে যাবো।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এফএ/এমএস