ছাত্র আন্দোলন
টাকার বিনিময়ে খুনের ‘নির্দেশদাতা’ পরিবর্তনের অভিযোগ
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় টাকার বিনিময়ে আসামির তালিকা থেকে খুনের নির্দেশদাতাদের নাম পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে। এতে আগের অভিযোগ প্রত্যাহার করে চার আওয়ামী লীগ নেতাসহ চিহ্নিতদের বাদ দিয়ে নতুন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গত ২৯ আগস্ট সোনাইমুড়ী উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী নারগিস আক্তার (৪০) তার ছেলে তানভীর হোসেন মাহমুদ (২২) হত্যার ঘটনায় ১০০ জনের নামোল্লেখ করে নোয়াখলী ৬ নম্বর আমলি আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদেশের জন্য রাখা অবস্থায় গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) অভিযোগ প্রত্যাহার করে ৪৪ জনের নামে নতুন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এতে নোয়াখালী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট গুলজার আহমেদ জুয়েলসহ ৪৬ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী এ এন এম এনাম হোসেন অভিযোগ প্রত্যাহার ও পরিবর্তনের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বিচারক জাকির হোসেন এ ঘটনায় আগে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না তা বুধবারের (৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ মামলার শুনানির তারিখ রয়েছে।
মামলার এজাহারে নোয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি এইচএম ইব্রাহীম, নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, নোয়াখালী-২ আসনের সাবেক এমপি মোরশেদ আলম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্টসহ ছাত্র ও যুবলীগের ৪৪ জন আসামি রয়েছেন।
এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ‘গত ৫ আগস্ট বিকেল ৪টার সময় সাবেক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার মিছিলে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, পেট্রোলবোমা, হকিস্টিক, চাইনজ কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। এতে আমার ছেলে তানভীর হোসেন মাহমুদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এছাড়াও একইসময় মো. ইয়াছিন (১৫), মো. হাসান (১৪), মো. ইয়াছিন (৩০) গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন, ২৯ আগস্ট এ মামলার এজাহার দাখিলের পর তিনবার অভিযোগের কপিতে আসামিদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এজন্য পর্দার অন্তরালে অন্তত দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একটি মহল তাদের সুবিধার জন্য আদালতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। এর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত।
জাগো নিউজের হাতে আসা দুটি এজাহারের বিষয়ে জানতে মামলার বাদী নারগিস আক্তারকে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে হত্যা মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার হওয়া অভিযুক্ত আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, শিহাব উদ্দিন শাহীন ও অ্যাডভোকেট গুলজার আহমেদ জুয়েলসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা সবাই মামলার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানালেও টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এর বেশি আর কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/এএসএম