ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ফ্রিল্যান্সিং

মাসে পৌনে দুই লাখ টাকা আয় করেন শাকিল

জেলা প্রতিনিধি | শরীয়তপুর | প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ইউটিউবে ভিডিও দেখে অনলাইনে আয়ের বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন শাকিল মিয়া (২৪)। এরপর বোনের একটি পুরোনো ফোন দিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করেন তিনি। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় বড় বাধা ছিল নেটওয়ার্ক।

একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে গাছের ডগায় পকেট রাউটার রেখে শুরু করেন অনলাইনে কাজ। আর এতেই বাজিমাত এই তরুণ যুবকের। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে পৌনে দুই লাখ টাকা। এ আয় দিয়েই নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।

সফল ফ্রিল্যান্সার শাকিল মিয়ার বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার আফাজ উদ্দিন মুন্দিকান্দি এলাকায়। বাবা ইসমাইল মুন্সি একজন কৃষক। মা শেফালী বেগম গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শাকিল সবার ছোট।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই যুবকের বাড়িতে পৌঁছাতে পেরোতে হয় বড় একটি বাঁশের সাঁকো। ২০১৬ সালে বিকে নগর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ২০১৮ সালে সরকারি বিকেনগর বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং গত বছর তেজগাঁও কলেজ থেকে স্নাতকে উত্তীর্ণ হন শাকিল। তার অনলাইনের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ইউটিউব দেখে বোনের একটি পুরোনো ফোন দিয়ে টেক কনটেন্ট তৈরি করেন তিনি। এতে বেশ সফলতাও পান।

আয় করার পাশাপাশি পেয়ে যান সিলভার প্লে বাটন। এদিকে তার আয় দেখে স্থানীয় লোকজনের ধারণা ছিল, কোনো অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন করছেন শাকিল মিয়া। তার পরিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হন তিনি।

ফ্রিল্যান্সিং, মাসে পৌনে দুই লাখ টাকা আয় করেন শাকিল

এদিকে পরীক্ষা চলে আসায় একপর্যায়ে পাঁচ মাস কাজ বন্ধ রাখতে হয় শাকিলকে। এতে তার চ্যানেলে ভিউজ আসা কমে যায়। পরবর্তীসময়ে ইউটিউবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয়ের বিষয়ে জানতে পেরে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন তিনি। এরপর অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিয়ের মাধ্যমে শুরু করেন ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ। বর্তমানে তিনি ইউএস, কানাডা, জার্মানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করেন। এতে তার মাসিক আয় হয় অন্তত ১৫০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা)। আর এই টাকা দিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন শাকিল।

শাকিল মিয়ার মা শেফালী বেগম বলেন, ‘ছেলেকে বিদেশ পাঠাবো বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার ছেলে বিদেশ যায়নি। ও ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করে বিদেশি পয়সা আয় করে। অন্য ছেলেরা বিদেশে যায় টাকা রোজগার করতে। আমার ছেলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ঘুরতে যায়। আমরা ওকে নিয়ে গর্ববোধ করি।’

ফ্রিল্যান্সিং, মাসে পৌনে দুই লাখ টাকা আয় করেন শাকিল

বাবা ইসমাইল মুন্সি বলেন, ‘ছেলে যখন অনলাইনে কাজ করতো, ওরে বলেছিলাম পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতে। কিন্তু ও অনলাইনে কাজ করবে বলে জানায়। ও নিজের আয় দিয়ে গাড়ি কিনেছে, জায়গা-জমি কিনেছে। আমরা ওর এমন সাফল্যে গর্বিত।’

স্থানীয় যুবক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকার সন্তান শাকিল অনলাইন লাখ টাকা আয় করেন। আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছি। এখন আপাতত বেকার। ইচ্ছা আছে ভাইয়ের কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখে আমিও টাকা রোজগার করবো।’

ফ্রিল্যান্সিং, মাসে পৌনে দুই লাখ টাকা আয় করেন শাকিল

এ বিষয়ে সফল ফ্রিল্যান্সার শাকিল মিয়া বলেন, ‘আমাদের এই এলাকাটি প্রত্যন্ত একটি অঞ্চল। আমি যখন ২০১৫ সালের দিকে প্রথম অনলাইনে কাজ শুরু করি তখন নেটওয়ার্ক খুবই ঝামেলা করতো। তখন আমার কাছে একটি পকেট রাউটার ছিল। সেটা আমি আমাদের বাড়ির গাছের মাথায় রেখে অনলাইনে কাজ করতাম। প্রথম একটি কাজে ৫০ ডলার পেয়েছিলাম। বর্তমানে প্রতিমাসে অন্তত ১৫০০ ডলার আয় করি।’

স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় অনেকেই আমার কাছে আসেন ফ্রিল্যান্সিং শিখতে। আমার ইচ্ছা আছে এ অঞ্চলের বেকার শিক্ষিত যুবকদের ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা। এতে আমাদের এলাকার যুবকদের বেকারত্ব সমস্যা দূর হবে।’

বিধান মজুমদার অনি/এসআর/জেআইএম