ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘ডাকাতির’ সময় গণপিটুনিতে বিএনপি নেতা নিহত, দলের দাবি পরিকল্পিত

উপজেলা প্রতিনিধি | মিরসরাই (চট্টগ্রাম) | প্রকাশিত: ১১:০৭ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ডাকাত সন্দেহে মো. রফিক (৪৪) নামে এক বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় আরও ১৪ জন আহত হয়েছেন।

নিহত রফিক উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের কাজীর তালুক এলাকার মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে। সাবেক ইউপি সদস্য মো. রফিক সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

বিএনপি নেতা রফিক ও তার সহযোগীদের বহন করা তিনটি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলও জ্বালিয়ে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা গিয়ে কারখানার ভেতর থেকে রফিকের মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

আহতরা হলেন, সাজ্জাদ হোসেন (২১), নুরুল করিম (২৮), সাইদুল (২২), আবদুর রহিম (২৬), নুরুজ্জামান (২৭), আবু তালিব (৩২), শহীদুল ইসলাম (৪৫), জহির (১৭), শহিদুল ইসলাম (২৮) ও আকবর হোসেন রনি (২২)। তাদের সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শনিবার মধ্যরাতে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এস কিউ নামের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির নির্মাণাধীন একটি কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাত সন্দেহে স্থানীয় লোকজন বিএনপি নেতা ও তার সহযোগীদের আটক করে গণপিটুনি দেন বলে জানা গেছে।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, ডাকাতির নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে রফিককে হত্যা করা হয়েছে।

এর আগে সাহেরখালীতে একটি মৎস্য প্রকল্পের মাছ লুট করে ওই গ্রুপটি। এ সময় লুটে বাঁধা দিলে তারা পাহারাদার আনোয়ার হোসেন নামে এক জামায়াত কর্মীসহ দুজনকে কুপিয়ে জখম করে এবং তার মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়।

এস কিউ কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এহসানুল কবির বলেন, ‘গত তিন মাসে তিন দফায় আমাদের কারখানায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তিন মাস আগে একবার কারখানায় ঢুকে নিরাপত্তাকর্মীদের বেঁধে ৮০ লাখ টাকার কেবল নিয়ে যায় ডাকাত দল। গত ২৯ আগস্ট রাতে আমাদের সাত নিরাপত্তাকর্মীকে বেঁধে বেধড়ক মারধর করলেও সেবার কিছু নিতে পারেনি। শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় দূরের একটি মৎস্য প্রকল্পে হানা দিয়ে ফেরার পথে দেশি অস্ত্র নিয়ে ১৪ থেকে ১৫ জনের একটি ডাকাত দল আমাদের কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীরা অ্যালার্ম বাজান। এতে আশপাশের কারখানার লোকজন ও রাতে খালে মাছ ধরতে আসা মানুষ তাদের ধাওয়া দেন। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পালানোর সময় মানুষ তাদের ধরে গণপিটুনি দেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জ্বালিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে জনতার হাত থেকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে আমাদের কারখানার ভেতর এনে রাখি। আমরা আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সকালে স্বজনরা কারখানায় এসে তাদের নিয়ে যান। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেন।’

‘ডাকাতির’ সময় গণপিটুনিতে বিএনপি নেতা নিহত, দলের দাবি পরিকল্পিত

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সিফাত সুলতানা বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টায় মো. রফিক নামের এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। এখানে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় আরও ১০ জনকে আনা হয়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তার করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের শিল্প পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শওকত হোসেন বলেন, ‘নির্মাণাধীন এস কিউ কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ দুর্বল। আগেও একবার এ কারখানায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাতেও দেশি অস্ত্র নিয়ে কিছু লোক কারখানায় প্রবেশের চেষ্টা করে বলে জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে কারখানার নিরাপত্তাকর্মী ও আশপাশের লোকজন মিলে ধাওয়া করে তাদের মারধর করে আটকে রাখেন। পরে গণপিটুনিতে আহত ব্যক্তিদের একজন মো. রফিক হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা দেশি অস্ত্র ও পুড়িয়ে ফেলা তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা হেফাজতে নিয়েছি আমরা। জোরারগঞ্জ থানা পুলিশসহ এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

তবে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নিহত রফিক সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। ১৫ বছর আগে তাকে নিয়ে নানা দুর্নাম থাকলেও এখন তিনি ভালো মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বিএনপির যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগের মানুষ ছিলেন তিনি। গতকাল রাতে সাহেরখালী এলাকায় মাছের প্রকল্প নিয়ে তার সঙ্গে কিছু লোকের ঝামেলা হয়েছিল। সেখান থেকে রাতে ফেরার পথে এস কিউ কারখানা এলাকায় তাদের ধরে ডাকাতির কথা ছড়িয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। আমি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করছি।’

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি কারখানায় মারামারি ঘটনা শুনেছি। রফিক নামে নিহত একজনের মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/জিকেএস