ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

লোডশেডিংয়ে কাহিল কুড়িগ্রামবাসী, যা বলছে কর্তৃপক্ষ

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ১২:৪৮ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কুড়িগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এতে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এবং গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। আর বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

কয়েকদিন থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল গৃহস্থালী কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাগামহীন লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকাগুলোতে দিনে রাতে এক ঘণ্টা পরপর চলছে ঘণ্টা খানেকের লোডশেডিং। আবার কোথাও কোথাও লোডশেডিংয়ের মাত্রা তার চেয়েও বেশি।

এদিকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনাবৃষ্টিতে আমন ক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেচ ব্যবস্থাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের বেশিরভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হওয়ায় আমন চাষে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন।

বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ গ্রাহকদের মধ্যে সামর্থ্যবানরা ঝুঁকছেন আইপিএসের দিকে। তবে রুটিন মেনে চলা লোডশেডিংয়ে আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ করা নিয়েও সংশয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক মোক্তার আলী জানান, বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে, আবার বৃদ্ধ মানুষও আছে। রাতে হিসাব করে এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। গরমে কেউই শান্তিতে থাকতে পারছি না।

কুড়িগ্রাম পৌর শহরের ব্যবসায়ী আবু মিয়া জানান, এক ঘণ্টা পরপর কারেন্ট যায়। মাঝে মাঝে টানা দেড়-দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং চলে। ব্যবসা হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করা যাবে না।

তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন ঘাটতির কথা বলছে স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা বলছে, সরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ ৫ ধরনের পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তবে সব প্লান্টের জ্বালানি সরবরাহ করে পিডিবি। বর্তমানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, কুড়িগ্রামের টগরাইহাট গ্রিডে জেলার ৫টি উপজেলার (সদর, উলিপুর,চিলমারী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারী) জন্য মোট চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৮ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট।

কুড়িগ্রাম শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তাদের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ১৩ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

নেসকোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক, কখনো অর্ধেকেরও কম। ফলে লোডশেডিং চলছে। সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিনা তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মহিতুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামে আমাদের প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৩০-৩৫ শতাংশ লোডশেডিং চলছে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এমএস