ত্রাণ দিতে গিয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ
ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে ত্রাণ দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিন শিক্ষার্থী। পরে তাদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গিয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২৭ আগস্ট ঢাকার উত্তরা থেকে নোয়াখালীর বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে যান একদল শিক্ষার্থী। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায়দের উদ্ধারসহ শুকনো খাবার ও চাল-ডাল বিতরণ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সদর উপজেলার ২ নম্বর দাদপুর ইউনিয়নের খলিফারহাটে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই দলের কথা (২১), আরাবী (১৮) ও সালমান (২২) নামে তিন শিক্ষার্থী।
সহপাঠীরা তাদের উদ্ধার করে বিকেল ৫টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগ থেকে তাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইন নেই বলে বাইরে থেকে আনতে বলেন। পরে ঢাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে হাসপাতাল থেকেই স্যালাইন দেওয়া হয়।
তবে অসুস্থ আরাবীর টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে হাতের ক্যানুলা খুলতে একাধিকবার নার্সকে ডাকলেও কেউ আসেননি। পরে নার্স না আসায় পাশের এক রোগীর স্বজন তার হাতের ক্যানুলা খুলে দেন। কিন্তু তিনি ক্যানুলার মুখ বন্ধ না করায় তার হাত থেকে রক্ত ঝরে। এতে আরাবী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনো কোনো চিকিৎসক না আসায় অসুস্থ তিনজনকে দ্রুত পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
খবর পেয়ে হাসপাতালের সামনে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ক্যানুলা খুলে দেওয়া রোগীর ওই স্বজনকে মারধর করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়লে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
উত্তরা ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্টাডিজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল ইবনে মাসুদ বলেন, ত্রাণ বিতরণে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়বো কখনো ভাবিনি। আমাদের বন্ধুরা পানিতে ডুবে অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে সঠিকভাবে চিকিৎসা তো দেয়নি বরং খারাপ আচরণ করেছে। বিষয়টি আমাদের কষ্ট দিয়েছে।
নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের বিএনসিসির এক ক্যাডেট বলেন, তিনদিন আগে আমাদের এক স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে বারবার ফোন করেও অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। অ্যাম্বুলেন্স চালক ‘তেল ও গ্যাস নেই’ এবং ‘অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দেবে কে’ বলে অসহযোগিতা করেন। আমি তাদের হাতে-পায়ে ধরেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রোগীকে এনেও ভালো চিকিৎসা পাইনি।
জেনারেল হাসপাতালের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাসিনা জাহান, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিমসহ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি বৈঠক হয়।
এতে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখারসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় উপ-তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাসিনা জাহান সমস্যার কথা স্বীকার করে ১৫ দিনের মধ্যে এর সঠিক সমাধানের আশ্বাস দেন।
সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখার জাগো নিউজকে বলেন, যদিও ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল আমার দায়িত্বে না, তবুও নোয়াখালীতে ত্রাণ দিতে আসা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় গাফিলতির খবর শুনে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আশা করছি এর সঠিক সমাধান হবে।
তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিনকে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। তার নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, বিষয়টি শোনামাত্রই সেখানে সিভিল সার্জনকে পাঠিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইকবাল হোসেন মজনু/জেডএইচ/জিকেএস