ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বন্যা

পানি কমলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চলছে যুদ্ধ

এম মাঈন উদ্দিন | মিরসরাই (চট্টগ্রাম) | প্রকাশিত: ০৮:১০ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০২৪

মিরসরাইয়ে বন্যার পানি কমে গেলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের। ভেসে গেছে অসংখ্য কাঁচা ও মাটির ঘর। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক ঘরবাড়ি।

উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বানের পানি নেমে গেছে। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট। অসংখ্য কাঁচা-ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।

এলাকার কালু ড্রাইভার বাড়ির তাপস দে বলেন, টানা সাতদিন আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলাম। সেখানে ছেলেপুলেরা ভালো খাবার দাবার দিয়েছে। বুধবার সকালে বাড়ি ফিরে দেখি বসতঘর-গোয়ালঘর কিছুই নেই। সব সর্বনাশা বন্যা কেড়ে নিয়েছে।

হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, এখানকার চিত্র আরও ভয়াবহ। পাশের হিঙ্গুলী খাল হয়ে ফেনী নদীর পানির তোড়ে এখানে প্রায় সবকটি কাঁচা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার অসংখ্য খামারের গরু-মুরগি ভেসে গেছে বানের জলে। পুকুরে মাছ নেই-ক্ষেতে নেই ফসল।

পানি কমলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চলছে যুদ্ধ

গ্রামের আনোয়ার অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, বন্যার প্রথম দিক থেকে পুরো গ্রাম ডুবে যায়। পাশে হিঙ্গুলী খাল হওয়ার দরুন এক রাতে গ্রাম প্লাবিত হয়। গ্রামের কোনো কাঁচা বাড়ির ঘর অক্ষত নেই। মানুষের হাঁস-মুরগি, খামারের গরু-মুরগি সব ভেসে গেছে। গ্রামের মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে বহুমুখী সহযোগিতা ছাড়া কখনো সম্ভব হবে না।

উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রাম টানা ছয়দিন বন্যার পানিতে ডুবেছিল। বুধবার সরেজমিন ইউনিয়নের আজমপুর, মুহুরী প্রজেক্ট ও বাঁশখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এখনো সড়কের পাশে দোকান-পাটে আশ্রয় নিয়ে আছে বানভাসি মানুষ।

এসময় মানিক জলদাস ও পিংকি রাণি জলদাসের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। নদীতে ভেসে গেছে পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তারা এখন কোথায় যাবেন কিভাবে যাবেন কিছুই বলতে পারছেন না।

এদিকে বুধবার সকালে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষা চালাতে মিরসরাই উপজেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ৯ সদস্যের একটি কমিটি করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯ ইউনিয়নের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করবেন এসব কর্মকর্তা। এছাড়া সহসা তথ্য পেতে সাধারণ মানুষকে নির্ভুল তথ্য দিয়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ৯ সরকারি কর্মকর্তাকে প্রধান করে সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাসগৃহ, টিউবওয়েল ও স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানার সমীক্ষা চালাবে। পরবর্তীতে অন্যান্য ক্ষতির সমীক্ষাও করবে তারা।

প্রথমদিকে ২১ আগস্ট উপজেলার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করলে চট্টগ্রামের শতাধিক সংস্থা-সংগঠন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা একযোগে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে। এসময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোলা ৮২টি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা ৩০ হাজার মানুষকে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সহায়তা দেন। এখানে টানা সাতদিনের বন্যায় অতিদুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও চট্টগ্রাম যুব রেডক্রিসেন্ট অ্যালমনাইয়ের উদ্ধার কর্মীরা একদিকে যেমন উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তেমনি এসব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমও সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

এ বিষয়ে বন্যাদুর্গত এলাকার দুর্যোগ মোকাবেলায় গঠিত মিরসরাই উপজেলা কমিটির সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খাঁন বুধবার বেলা ২টার দিকে জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল অবাক করার মতো। এখন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন হবে চ্যালেঞ্জ।

এম মাঈন উদ্দিন/আরএইচ/এমএস