ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর

তিন নিরাপত্তা স্তরেও ধরা পড়লো না ১৬ কেজি সোনার চালান!

আহমেদ জামিল | সিলেট | প্রকাশিত: ০৬:৪৩ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২৪

১০৫টি সোনার বার ও গলিয়ে তৈরি চারটি স্বর্ণপিণ্ড নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ বিমানবন্দর থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আসেন হোসাইন আহমদ। মাত্র ২০ বছর বয়সী ওই যুবক বিমানবন্দরে নেমে ইমিগ্রেশন শেষে রেড চ্যানেল ও গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করে কনকোর্স হলে চলে আসেন। অথচ কারও চোখে ধরা পড়েনি এত বড় চালান। এমনকি স্ক্যানিং মেশিনেও সোনার বারগুলো ধরা পড়েনি।

তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি প্রবাসফেরত হোসাইন। বিমানবন্দরের কনকোর্স হল থেকে তাকে সন্দেহজনকভাবে আটক করেন গোয়েন্দা সদস্যরা। আটকের পর দুই দফায় স্ক্যান করেও সোনার বারের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। তারপরও হাল ছাড়েনি গোয়েন্দা টিম।

সবশেষ অনেকটা চ্যালেঞ্জ করে ল্যাগেজ তল্লাশি শুরু করেন গোয়েন্দা সদস্যরা। একপর্যায়ে লাগেজের ভেতর তিনটি কফি তৈরির মেশিনের ভেতর থেকে ১০৫ পিস সোনার বার ও গলিয়ে তৈরি চারটি স্বর্ণপিণ্ড উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা সোনার ওজন ১৫ কেজি ৯৯৫ গ্রাম। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা।

তিন নিরাপত্তা স্তরেও ধরা পড়লো না ১৬ কেজি সোনার চালান!

বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল ৮টা ২১ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২৫২ ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন হোসাইন আহমদ। তার বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের গোমরাকান্দি গ্রামে। ৬ মাস আগে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই গিয়েছিলেন। এবারই প্রথম প্রবাস থেকে দেশে ফিরছিলেন। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয় কাস্টমস গোয়েন্দা পুলিশ।

এদিকে, সোনার এত বড় চালান নিয়ে তিনটি নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এমনকি তাদের স্ক্যানিং মেশিন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা সদস্য বলেন, ‘কাস্টমসের স্ক্যানিং মেশিন নিয়ে সবসময় একটা প্রশ্ন থাকে। প্রায়সময়ই চোরাচালানের পণ্য, সোনার বার এই স্ক্যনিং মেশিনে ধরা পড়ে না। এজন্য সিভিল এভিয়েশনের স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার করতে হয়।

এ বিষয়ে বিমানবন্দর কাস্টমস ও শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার আসাদ উজ জামান বলেন, সব যাত্রীকে তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। সন্দেহজনক যাত্রীদের তল্লাশি করা হয়। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা যাত্রীদের তল্লাশি হার বাড়িয়েছি। স্ক্যানিংয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

তিন নিরাপত্তা স্তরেও ধরা পড়লো না ১৬ কেজি সোনার চালান!

সোনার চালান জব্দের পর দুপুর দেড়টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট বিজি- ২৫২ বুধবার সকাল ৮টা ২১ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। নিয়ম অনুযায়ী বিমান থেকে নামার পর যাত্রী হোসাইন আহমদ কাস্টমসের লাগেজ পরীক্ষা করিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করার প্রস্তুতি নেন।

তিনি বলেন, হোসাইন আহমদের মালামাল স্ক্যান করে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া না যাওয়ায় তিনি বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। গোয়েন্দা সদস্যরা নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে আটক করে মালামাল ফের তল্লাশি চালান। একপর্যায়ে তার সঙ্গে করে নিয়ে আসা কফি তৈরির যন্ত্রগুলোতে সন্দেহ পোষণ করলে সেগুলো খুলে তল্লাশি চালানো হয়। এসময় কফি মেশিনের ভেতর থেকে ১০৫টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গলিয়ে আনা চারটি স্বর্ণপিণ্ড উদ্ধার করা হয়।

বিমানবন্দরে দায়িত্বরত গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের কনকোর্স হল বহির্গমন যাত্রীদের শেষ নিরাপত্তা স্তর। এখান থেকে বেরিয়ে গেলে কাউকে তল্লাশির আর সুযোগ নেই। নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ওই যাত্রীকে আটক করে তল্লাশি করা হয়।

 আহমেদ জামিল/এসআর/জিকেএস