বন্যায় চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে চালের
সিলেটে প্রতিবছর আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে চালের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবার দুইমাস আগেই বেড়ে গেছে চালের দাম। এক লাফে বস্তাপ্রতি গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে দাম। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে স্থানীয় চালের দাম। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য চালের চাহিদা বাড়ায় এবার মৌসুমের আগেই চালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া সরকার পতনের পর থেকে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। যার কারণে চাহিদার তুলনায় বাজারে চাল কম আসছে।
এদিকে চালের সঙ্গে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে কাঁচামালের বাজার। পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। তবে অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার এখনো স্থিতিশীল রয়েছে।
কাঁচামালের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংকে ডলার সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে পারছেন না তারা। ফলে পণ্য আমদানি কম হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। এছাড়াও সরকার পতনের কিছুটা প্রভাবও পড়েছে কাঁচামালে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সিলেটের কালিঘাট এলাকার বেশ কয়েকটি পাইকারি চালের দোকান ও কাঁচামালের বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কম দামের চাল হিরা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২০৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে হিরা বিক্রি হয়েছিল ১৮০০ টাকায়। এছাড়াও ২৯ মালা বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়, গেল সপ্তাহে ছিল ২৩০০ টাকা। সুপারমালা গত সপ্তাহে ছিল ২৬০০ থেকে ২৭৫০ টাকা, এ সপ্তাহে ২৮০০ থেকে ২৮৫০ টাকা।
এছাড়াও এ সপ্তাহে ২৮ মিনিকেট আতব ৩২০০ টাকা, জিরাশাইল ৩৫০০ টাকা, সিদ্ধ এস আলম ২৮৬০ টাকা ও মোটা সিদ্ধ ২৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ২৮ মিনিকেট আতব ছিল ৩০০০ টাকা, জিরাশাইল ৩৩০০ টাকা, সিদ্ধ এস আলম ২৬০০ টাকা ও মোটা সিদ্ধ ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কালিঘাট এলাকার পাইকারি চালের দোকান বুরহান ট্রেডার্সের মালিক বুরহান উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে চালের দাম কিছুটা বাড়ে। এবার দুই মাস আগেই চালের দাম বেড়ে গেছে।
দু’মাস আগে দামবৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বন্যার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এতে চালের চাহিদা বাড়ছে। যার কারণে আগেই দাম বেড়ে গেছে।
একই এলাকার রুহেল এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, হঠাৎ করেই চালের দাম বেড়ে গেছে। মিল মালিকরা চাল কম সরবরাহ করছেন। তাছাড়া বন্যার কারণে মোটা চালের (লোকাল) চাহিদা বাড়ায় মোটা চালের দামও বেড়েছে।
এদিকে চালের সঙ্গে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কালিঘাট এলাকার কয়েকটি কাঁচামালের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১১৫ টাকা। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। এছাড়া মানভেদে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ২৩০ টাকায়। গত সপ্তাহে আদার দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা।
তবে কাঁচামাল ছাড়া অন্য নিত্যপণ্য অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। এ সপ্তাহে মসুর ডাল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, ছোলা ১১২ টাকা, ছোলার ডাল ৭৬ টাকা, মুগডাল ১৩০ থেকে ১৬২ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬১ টাকা, ৫ লিটার ৭৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও প্রায় একই দামে এসব পণ্য বিক্রি হয়েছে।
কালিঘাট এলাকার সুরমা বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার বিজয় দাশ বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে এলসি হচ্ছে না। চাইলেই ব্যাংক পরিবর্তন করাও যাচ্ছে না। এতে আমদানির ওপর একটা বড় প্রভাব পড়ছে। তাছাড়াও সরকার পতনের একটা প্রভাবও পড়েছে বাজারে। যার কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজ রসুনের দাম।
একই এলাকার পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমীন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাসুদ আহমেদ বলেন, কাঁচামালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে অন্যান্য নিত্যপণের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
আহমেদ জামিল/এফএ/এমএস